সাতক্ষীরার তালার মেধাবী কলেজ ছাত্রকে অপহরণের পর বিবস্ত্র করে তার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামি তালা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আকিব গ্রেপ্তারের ২০ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর দু’টোর দিকে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক মহিদুল ইসলাম তাকে দু’ হাজার টাকা বেল বন্ডে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।
সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম তৃতীয় আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোর্ট উপপরিদর্শক (সিএসআই) হাবিবুর রহমান জানান, সৈয়দ আকিবকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের গারদে আনা হয়। আগেই তার আইনজীবীরা আদালতে জামিনের আবেদন করেন। শুনানীকালে সৈয়দ আকিবের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি তার জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বিচারক মহিদুল ইসলাম তাকে দু’ হাজার টাকার বেল বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন। জাামিন নামার কাগজ জমা দিয়েই কোর্ট গারদ থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রাজীব রায় চৌধুরী সঞ্জয়।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান জানান, বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে খুলনার ডুমুরিয়া থানা এলাকা থেকে কলেজ ছাত্রকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ আকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। সৈয়দ আকিব তালা উপজেলার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে। মামলার বাকি চার আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে।
প্রেমের বিরোধকে কেন্দ্র করে গত রোববার বিকালে কলেজ ছাত্র তালার জাতপুর এলাকার শোয়েব আজিজ তন্ময়কে তালা কলেজ ছাত্রাবাসে ডেকে এনে বেধড়ক মারপিট করে মাথা মুড়িয়ে দেয় তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব সহ তার কয়েক সঙ্গী। পরের দিন সোমবার তন্ময়ের বাবা আজিজুর রহমান বাদি হয়ে সৈয়দ আকিবকে প্রধান আসামি ও শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী, ছাত্রলীগ কর্মী জেআর সুমন, জয় এবং নাহিদ হাসানকে আসামি করে চাঁদাবাজি, মারপিট, অপহরণসহ অন্যান্য অভিযোগে তালা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আকিবকে গ্রেপ্তার করে। বাকি ৪ আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন। এদিকে সংগঠনবিরোধী কাজ করায় সৈয়দ আকিবকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার করে জেলা ছাত্রলীগ।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে নিতেই চাঞ্চল্যকর এ মামলায় জামিন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে টানা ৫ ঘন্টা নির্যাতন, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করলো, মাথা ন্যাড়া করে দিল। এরপর মোবাইলে আমার স্ত্রীর কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলো। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে তালা থানায় মামলাটি রেকর্ড হলেও প্রধান আসামি গ্রেপ্তারের পরই জামিন? এটি আসামিদের আরও উস্কে দেওয়া হলো। আমার পরিবার আবারও আতঙ্কের মধ্যে পড়লো। পরস্পর যোগসাজশ করে এই জামিন করানো হয়েছে। আমি ন্যয় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তিনি এবিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।