শষ্য ভান্ডার খ্যাত খুলনার দাকোপে উপজেলা। গেল বছরের তুলনায় এখানে এ বছর কম জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সেচে মিষ্টি পানির চরম সংকটের কারণে তরমুজের ফলন কম হলেও কৃষকরা দাম পেয়েছেন বাম্পার। ফলে এলাকার হাজারো কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গড় হিসাব মতে ২৮৩ কোটি ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভবনা। এ তরমুজ খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৬ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিলো ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বোরো ধান ৩৪০ হেক্টর, সূর্য্যমুখি ৩০৮ হেক্টর, ভূট্টা ২৮ হেক্টর, বাঙি ২০ হেক্টর, তিল ৭ হেক্টর, মুগডাল ৮ হেক্টর, পাট ১ হেক্টর, আদা ৪ হেক্টর, হলুদ ৮ হেক্টর ও অন্যান্য শাক সবজি ২০৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। তা ছাড়া পতিত রয়েছে ১৩ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমি। তবে প্রচন্ড খরা ও বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎস খাল ও পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তরমুজ ক্ষেতে চরম সেচ সংকটে পড়েন এলাকার কৃষকরা। চাষের মাঝের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় সেচ সংকট কিছুটা লাঘব হয়। এতে অল্প কিছু সংখ্যক কৃষকের লোকসান হলেও অধিকাংশ কৃষক তরমুজের ফলন কম পেলেও বাম্পার দাম পেয়ে হয়েছেন লাভবান।
কৃষকদের অভিযোগ স্থানীয় দালাল, ফড়িয়া ও পরিবহন সিন্ডিকেট, ফেরীঘাটে যানযটে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন এবং ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় না হলে আরো দাম বৃদ্ধি হতো বলে অনেকে মনে করেন।
কৈলাশগঞ্জ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কৃষক সিন্ধু রায় বলেন, তিনি ৯ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তরমুজ চাষ শুরুর আগে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি রাতের আধারে কয়কটি স্লুইচ গেট দিয়ে লবণ পানি তুলে দেয়। এতে জলাশয়েগুলো লবণ পানিতে সয়লাব হয়। ফলে মিষ্টি পানির অভাবে তিনি খেতে সেচ সংকটে পড়েন। পরবর্তীতে চাষের মাঝের দিকে বৃষ্টি হলে সেচ কিছুটা লাঘব হয়। যার কারণে তার খেতে তরমুজের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে এবং মোট ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। তবে বীজে অতিরিক্ত ভেজালের কারণে এবার মাল অনেক ছোট হয়েছে বলে তিনি জানান।
বটবুনিয়া এলাকার কৃষক প্রনব কবিরাজ জানান, এবার ১৮ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়। সেচের চরম সংকট এবং ভাইরাস লেগে সব গাছ মারা যায়। কৃষি কর্মকর্তার মরামর্শ নিয়েও একটি গাছও বাঁচাতে পারেনি। এবার তরমুজ চাষের তার লোকসান হয়েছে বলে তিনি আরও জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে.এম মাকসুদুন্নবী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর তরমুজের ফলন অনেক কম হয়েছে। কিন্তু সেচের মিষ্টি পানির সংকট থাকলেও এলাকার কৃষকরা দাম পেয়েছেন ভালো। তরমুজ খেত বিক্রিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে এবছর মাল ছোট হলেও গড় হিসাব অনুযায়ী ২০ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার কেজি তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। এভারেজ ১৪ টাকা কেজি ধরা হলে ২৮৩ কোটি ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার আর বিঘা প্রতি ৬৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ এসজেড