আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যের স্বার্থে তফসিল পেছানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা। রোববার (১৯ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতার সাক্ষাৎ শেষে বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে দুপুর ১২টায় বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও মশিউর রহমান রাঙ্গা। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান এমপি, রাহ্গির আল মাহি সাদ এরশাদ এমপি ও বিরোধী দলীয় নেতার মূখপাত্র কাজী মো. মামুনূর রশিদ।
এ সময় মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিরোধীদল হিসেবে অংশগ্রহণ করবে। সেই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজনে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানান তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সেদিন সাক্ষাতের আগে জিএম কাদের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া চিঠি পেয়েছিলেন।
এদিকে কার স্বাক্ষরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে, লাঙ্গল প্রতীকের মালিক কে হবেন এবং জাপা মহাজোটের অংশ হয়ে নির্বাচন করবে কী করবে না এ নিয়ে শনিবার (১৮ নভেম্বর) দিনভর চলে নানা নাটকীয়তা।
শনিবার জিএম কাদেরের পক্ষে দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু স্বাক্ষরিত চিঠি নির্বাচন কমিশনে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুযায়ী জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। চিঠিতে জিএম কাদের তার চারটি নমুনা স্বাক্ষর প্রদান করেন।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে উল্লেখ করে ইসিকে আরেকটি চিঠি দেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। চিঠিতে তিনি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আগের তিনটি সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারও চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এটা হবে শুধু নির্বাচনী জোট।
চিঠিতে রওশন এরশাদ আরও বলেন, নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা লাঙ্গল কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।
এছাড়া শনিবার (১৮ নভেম্বর) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কার সইয়ে কেনা হবে জানতে চেয়ে বিএনপিসহ ৪৪ দলকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চিঠিতে বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনীতদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা এবং প্রতীক বরাদ্দ প্রসঙ্গেও জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে ইসি উল্লেখ করেছে, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২(৩ক) দফা(২) এর অধীন প্রত্যেক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী মাধ্যমে স্বাক্ষরিত এই মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে যে, প্রার্থীকে ওই দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত থাকে, কোনো নিবন্ধিত দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া যাবে। একের অধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তাদের প্রার্থিতা অনুচ্ছেদ ১৬ এর দফা (২) সাপেক্ষ হবে।’
‘১৬(২) যেক্ষেত্রে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা এ ধরনের পদধারী কোনো ব্যক্তি থেকে স্বাক্ষরিত একটি লিখিত নোটিশ দিতে হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখে বা এর পূর্বে তিনি স্বয়ং বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারকে কোনো প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন সম্পর্কে অবহিত করবেন। ওই দলের অন্যান্য প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত হবে।’
চিঠিতে ইসি জানায়, ‘আপনার দলের যে পদধারীর স্বাক্ষরে কোন প্রার্থীকে আপনার দলের প্রতীকে কোন আসনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরপিওর আর্টিকেল ১২(৩এ)বি) এবং ১৬(২)(৩) অনুযায়ী মনোনয়ন প্রদান করা হবে, সে পদধারীর নাম, পদবী ও সত্যায়িত নমুনা স্বাক্ষর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে অনুরোধ করা হলো। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে এগুলোর অনুলিপি পাঠাতে অনুরোধ করা হলো।’
খুলনা গেজেট/এনএম