উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরে ভাসমান সেতু স্থাপন করে হাজারো মানুষের যাতায়াতের সুব্যবস্থা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশন’। জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের কষ্ট লাঘবে ৫৬টি ড্রাম ও কাঠ দিয়ে ১ লাখ ৮৪ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে ৩৫০ ফিট দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু। জোয়ারে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সেতু উপরে ভেসে ওঠে, আবার ভাটায় পানি নেমে গেলে নিচে নেমে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ২০২১ সালের ইয়াসের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুরা প্রতাপনগর ইউনিয়ন। মূহুর্তে দরিদ্র মানুষ ভিটামাটি হারা হয়, কেউ মৎস্য ঘের হারা হয়। সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে অনেকেই। ভেঙে পড়ে সম্পূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থা । ফসলি জমি, ঘের বিলিন হয়ে যায় নদী গর্ভে । ইউনিয়নটির হাওলাদার বাড়ি ও দরগাহ তলার আইট নামক দুটি গ্রাম সম্পূর্ণ বিছিন্ন হয়ে যায় । এখানকার সহস্রাধিক মানুষ বাজার ঘাট,মসজিদ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করত সেটা পরিণত হয় বিশাল খালে। একটা মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মত কোন রাস্তা অবশিষ্ট ছিলো না । স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দৈনিক ২০ টাকা খরচ হতো নৌকায় পারাপারে। একটি মাত্র নৌকায় পার হতে হতো ৪০০ পরিবারকে । ব্যাপক দূর্ভোগের মধ্যে জীবন যাপন করছেন সেখানকার মানুষ।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সাইদুল ইসলাম বলেন, যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখান ৪০ টি পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ ও কবর স্থান ছিল । সব কিছু নদীতে বিলীন হয়ে ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর খাল তৈরি হয়ে যায়। ফলে বাঁশের স্যাকো নির্মাণ করা দূরহ ছিল। এ বিষয়টি ‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশন’ এর সদস্যদের জানালে উনারা মানুষের সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন। তিনি আরও বলেন, ৩ মার্চ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে ২৯ মার্চ শেষ করি। ৫৬টি ড্রাম, সাড়ে ৩শ’ সেফটি কাঠ ও প্রায় ২ মণ লোহা (কাটা) দিয়ে সেতুটি তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় আব্দুল গফুর সানা, মানিক হাওলাদার, শামছুগাজীসহ কয়েকজন জানান, সেতুটির মাধ্যমে মানুষের যাতায়াতের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হচ্ছে। সেতুটি বিছিন্ন দু`গ্রামকে সংযুক্ত করেছে ইউনিয়নটির সাথে । এখন মানুষ নির্বিঘ্নে যেতে পারছে বাজার-ঘাট, স্কুল,কলেজ, মসজিদ ও হাসপাতালে।
ডু সামথিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডাঃ নাজমুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা দেশের বিভিন্নস্থানে জনকল্যানকর কাজ করি। প্রতাপনগরের মানুষের দূর্ভোগের কথা জানতে পেরে সেখানকার স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগীতায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি একজন ডোনার ও আমাদের ফাউন্ডেশনের সদস্যদের অর্থায়নে সেতুটি তৈরি করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই