শালতা নদীর জোয়ারের পানির তীব্র স্রোতে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ তৃতীয় বারের মত আবারও ভেঙ্গে গিয়ে তলিয়ে গেছে ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউয়িনের লতাবুনিয়া ও বাঁশতলা গ্রাম দু’টি। ভেসে গেছে ছোট বড় প্রায় দু’শতাধিক চিংড়ি ঘেরসহ সবজি ক্ষেত। গৃহহীন হয়ে পড়া অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের ওপর। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় বাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়া লতাবুনিয়া গ্রামের সান্তনা মিস্ত্রী, নমিতা রায়, রবিন রায়সহ অনেকের সাথে। তারা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় বাঁধ ভেঙ্গে গ্রাম দু’টি ডুবে যায়। সেই থেকে বাঁধের ওপর বাস করছি। এ পর্ষন্ত কোন সরকারি সাহায্য পাইনি। খাইয়ে না খাইয়ে দিন যাতেছে। কেউ খোঁজ নিনি। আশা করিলাম এবার শুকনোর সময় রাস্তা বান্ধা হলি আবার বাড়ি ফিরে গিয়ে কাজ কাম করে সংসার চালাতি পারবানে। আবার রাস্তা নতুন করে ভাঙ্গে গেছে। আর বাড়ি যায়া হলো না।’
উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাশ বলেন, গ্রাম দু’টি ব-দ্বীপ আকৃতির। চারিদিকে শালতা ও ভদ্রা নদী দিয়ে বেষ্টিত। প্রায় ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে শালতা নদী তীরবর্তী বাঁধ ভেঙ্গে যায়। স্থানীয় ও সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রাম দু’টি রাস্তাঘাট ১৯ টি এল করা হয়। এরপর টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। সম্প্রতি স্কেভেটর দিয়ে বাঁধ পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) রাতে শালতা নদীর পাশ দিয়ে নির্মাণনাধীন বাঁধ ভেঙ্গে যায়। নতুন করে কমিটি করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে বর্তমান বাঁধ মেরামতের কাজ করা হচ্ছে।
লতাবুনিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য শংকর গাইন জানান, নতুন ও পুরাতন কমিটির মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় গত রবিবার সকালে বাঁধের কাজ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে দিলীপ মন্ডল, সুজিত মন্ডল, সুশান্ত মন্ডল আহত হয়েছে বলে শুনেছি।
প্রকল্পের নির্বাচিত কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার মন্ডল বলেন, বাঁধ নির্মাণের জন্য সম্প্রতি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গোপনে একটি কমিটি তৈরি করে ৫১ লাখ টাকায় চুক্তি করে সিডিউল বর্হিভূত নিম্নমানের কাজ করায় পুনরায় বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। এ নিয়ে সন্তোষ মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে আমার ভাই সুজিত মন্ডলসহ আমাকে মারপিট করে আহত করে।
স্কেভেটর মালিক রিজাউল করিম বলেন, আমার সাথে ৫১ লাখ টাকায় এল সি এস কমিটির সাথে বাঁধের কাজ নির্মাণের চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সে মোতাবেক মাপ দিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার বাঁধে মাটি দিয়ে পুনঃ নির্মাণ করেছি। হঠাৎ জোয়ারের পানিতে ৩/৪ স্থানে ভেঙ্গে গেছে।
খুলনা গেজেট/এনএম