ডুমুরিয়ায় ৭ দিনের লকডাউনে বদলে গেছে সড়ক মহাসড়কের চেহারা। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তার মধ্যে লকডাউনের ৭ দিন অতিবাহিত হচ্ছে (২৮ জুন)। ৭ দিনের লকডাউনে ২৫টি মামলায় ৩৯ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দেখা গেছে, সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে বদলে গেছে সড়ক মহাসড়কের চেহারা। লকডাউনে সর্বাত্মকভাবে পালনে বাধ্য করতে পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়ক ও মোড়ে মোড়ে টহল দিয়েছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রাস্তায় পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, রিকশা, মোটর সাইকেলসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন কোন যানবাহন চোখে পড়েনি। বাইরের কেউ ঢুকতে পারেনি। এক এলাকা হতে অন্য এলাকায় যেতে না পারার জন্য বাঁশ দিয়ে অনেক সড়কের পথ আটকে দিয়েছে পুলিশ। চলতি লকডাউনের প্রথম দিন থেকে ৭ম দিন পর্যন্ত (২২জুন হতে ২৮জুন পর্যন্ত) এমন চিত্র দেখা গেছে ডুমুরিয়ায়। ইতিপূর্বে ডাকা লকডাউন গুলোতে রাস্তায় মানুষের ব্যাপক সমাগম ছিল। চায়ের দোকান গুলোতে ছিল চায়ের আড্ডা। তবে এবার রাস্তায় মানুষের চলাচল খুবই সীমিত। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হলেই পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে
তাছাড়া খুলনা জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় (১৯জুন) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত বিধি নিষেধ আরোপ ও লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
বিধি নিষেধে বলা হয়েছে, খুলনায় করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব বাড়ায় ২৮ জুন পর্যন্ত সব ধরণের দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচা বাজারের দোকান প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ সময়ের মধ্যে হোটেল রেস্তোরা গুলো পার্সেল আকারে খাবার সরবরাহ করতে পারবে। ওষুধের দোকান গুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে। সব ধরণের পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জেলা অভ্যন্তরে সবধরণের সাপ্তাহিক হাট/ গরুর হাট বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে অথবা আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগমন ও বহিরাগমন বন্ধ থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া হওয়া যাবে না। বাইরে অবস্থানকালে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। গত ৭ দিনে এ নিয়ম মেনে চলেছে সর্বস্তরের মানুষ।
সরকারি বেসরকারি অফিসের জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিস চলাকালীন তাদের নিজ নিজ অফিসের পরিচয়পত্র নিয়ে বাইরে চলাচল করেছে। আইন শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেয়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর গুলো (স্থল বন্দর, নদী বন্দর ও সমুদ্র বন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং উৎপাদনশীল শিল্প ও কলকারখানা উৎপাদন কার্যক্রম এ বিধিনিষেধের আওতামুক্ত ছিল।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, খুলনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান বলেন, খুলনা জেলা ও মহানগরে সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রতিটি গ্রামে মাইকিং ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন দু’দিন আগে থেকে শুরু করেছিলাম। খুলনার সাথে সাতক্ষীরা ও যশোরের সংযোগ ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে কঠোর নিরাপত্তা বসিয়ে সকল ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। খুলনা জেলার চারপাশে মোট ২৬টি চেক পোষ্ট বসানো হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের যত দায়িত্ব আছে সব ধরণের দায়িত্ব বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে জেলার ৯টি থানাকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশের পক্ষ থেকে যা যা করার সবই করা হয়েছিল গত ৭ দিনে। যা লকডাউনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার (নবাগত) বলেন, খুলনায় সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে ছিল। লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা জুড়ে মোট ২৬ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছে। লকডাউন চলাকালে সপ্তাহব্যাপী প্রশাসনের এ কঠোরতা অব্যাহত ছিল।
খুলনা গেজেট/এনএম