খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৭ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার

ডুমুরিয়ায় বাহারী মাছে হেমায়েত বিশ্বাসের রঙিন স্বপ্ন

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, চুকনগর

নিজ এলাকায় তিনি বেকার যুবকদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। তার সফলতা বেকার যুবকদের মনে আশার আলো দেখাচ্ছে।বলছিলাম খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা গ্রামের বাসিন্দা এবং বিশ্বাস কার্প ও বাহারী মাছের হ্যাচারী মালিক জনাব হেমায়েত বিশ্বাসের কথা, যিনি অত্র অঞ্চলে রঙিন মাছের চাষ করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।

সৌখিন একুরিয়ামের রঙিন মাছ এখন চাষ হচ্ছে তার বাড়ির আঙিনায় চৌবাচ্চায়, পুকুরে। বাসায় ঢুকতেই দেখা মেলে উঠানে কংক্রিটের তৈরী বিশটি চৌবাচ্চায় গোল্ড ফিশ, গাপ্পি, কমেট, অ্যানজেল, ব্লু গোড়ামি, রেড গোড়ামি, অরেন্ডা গোল্ড, কই কার্প, ব্লাকমোর, কিচিং, মিলকি কই, রেড আই প্লাটি রোজি বার্ব, ফাইটিং ফিশ, ব্ল্যাক মলি, রেড মলি ইত্যাদি বাহারী প্রজাতির মাছের। একেকটি মাছ যেন বসন্তে ফোঁটা একেকটি রঙিন ফুল যারা চৌবাচ্চার জলে জলকেলিতে ব্যস্ত।

জনাব হেমায়েত বিশ্বাস পেশায় একজন শিক্ষক, দীর্ঘ ছত্রিশ বছর যাবৎ শিক্ষকতা করেন। তবে বহু আগ থেকেই তার মাছের সাথে সখ্যতা। মাছ চাষের প্রতি ছিল তার এক আত্মার টান। একসময় তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি দুই জন কর্মচারী নিয়োজিত করে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। মাছের প্রতি টান থেকেই তিনি তার সন্তানদের মৎস্য বিষয়ে লেখাপড়া করান এবং কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ করে তোলেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি খামারে কার্ফু মাছের পোনা উৎপাদনে সক্ষম হন এবং মাছ চাষের পাশাপাশি একটি হ্যাচারী স্থাপনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

জনাব বিশ্বাস একজন সৌখিন মানুষ এবং সখের বশেই তিনি বাসায় অ্যাকিুরিয়ামে রঙিন মাছ লালন পালন করতেন। একদিন টেলিভিশনে তিনি রঙিন মাছ চাষের উপর একটি প্রতিবেদন দেখেন এবং কাঁচের দেয়ালে বন্দি অ্যাকুরিয়ামের সখের মাছকে বাণিজ্যিক রূপদান করতে উদ্যোগী হন। এ উদ্দেশ্যে তিনি তার সন্তানের মাধ্যমে রঙিন মাছচাষী সাইফুল্লাহ কাজীর সাথে পরিচিত হন এবং তার খামার পরিদর্শন করেন। তাছাড়া রঙিন মাছ চাষ ও হ্যাচারী বিষয়ে অধিকতর জ্ঞান লাভ ও পরামর্শের জন্য তিনি ডুমুরিয়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরে যান। ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক রঙিন মাছ চাষ ও হ্যাচারী করার বিষয়ে তাকে পরামর্শ প্রদান করেন ও কারিগরি সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

তিনি স্বল্প পরিসরে মাটির পাতিল, কসকেট, প্লাস্টিকের ড্রাম বা পটে রঙিন মাছের চাষ ও হ্যাচারীর কর্মকান্ড শুরু করেন। তিনি তার হ্যাচারীকে বড় পরিসরে শুরু করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। কিন্তু অর্থ তার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । ইতিমধ্যে একদিন মাছের সমস্যা দেখা দিলে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরে আসেন। অত্র দপ্তরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাকে যথাযথ পরামর্শ প্রদান করেন এবং তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও তার আর্থিক সংকট সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল এগ্রিকারচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-৷৷ প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তাদের জন্য এগ্রিকালচারাল ইনোভেশন ফান্ড-৩ (এআইএফ-৩) এর আর্থিক অনুদানের ব্যাপারে অবগত করেন। তখন জনাব বিশ্বাসের চোখে-মুখে ফুটে উঠে স্বপ্ন পূরণের আশা। যথাযথ নিয়ম মেনে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার মাধ্যমে এআইএফ-৩ এর প্রস্তাব পাঠানো হয় এবং আর্থিক অনুদান পান। আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে তিনি গড়ে তোলেন হ্যাচারী কমপ্লেক্স সহ ২০ টি চৌবাচ্চা।

বর্তমানে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন হ্যাচারীতে রয়েছে নানান প্রজাতির বাহারি মাছ। এ হ্যাচারীর বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করে পোনা উৎপাদন করা হয়। ফলে একই আকারের গুণগত মান সম্পন্ন পোনা পাওয়া যায়। গত বছর তিনি প্রায় তিন লাখ টাকার রঙিন মাছের পোনা বিক্রি করেছিলেন। এ বছর প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার পোনা বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী। এখন তার হ্যাচারীতে চার জন স্থানীয় বেকার যুবক কাজ করছেন। এছাড়াও এই  এলাকার অনেক যুবক তাকে দেখে তাদের বেকারত্ব ঘোচানোর স্বপ্ন দেখছেন। এক সময়ের শখ রঙিন মাছই হয়ে উঠেছে এখন তার অন্যতম আয়ের উৎস। রঙিন মাছ দিয়েই তিনি বুনছেন তার রঙিন স্বপ্ন।

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!