খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাগুলোতে খোলামেলা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পঁচা-বাসি ও নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী বিক্রয় করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর অতি মুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ি আইন কানুনের প্রতি কোন তোয়াক্কা না করেই হোটেলগুলোয় পঁচা-বাসি ও নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী নির্বিঘ্নে বিক্রয় করছে। এসব খাদ্য খেয়ে প্রতারিত ও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা। প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসি জরুরী ভিত্তিতে অভিযানের দাবি জানিয়েছেন।
বিশেষ করে উপজেলার চুকনগর এলাকা হোটেলের শহর নামে পরিচিত। শহরটি উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নগরী। চুকনগর এলাকাটি খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার সংযোগস্থল হওয়ায় অন্যান্য স্থানের চেয়ে এটির গুরুত্ব অনেক বেশী। তাছাড়া বিভাগীয় শহর খুলনার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত। প্রতিদিনই দূর-দূূরন্ত হতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ চলাচল করে এ শহরের উপর দিয়ে। দূর-দুরন্ত হতে হাজার হাজার ব্যবসায়ি ব্যবসা বাণিজ্য করতে আসে এখানে।
এখানকার হোটেল রেস্তোরা গুলোতে বিশেষ করে মাংশ বিক্রয়ের হোটেলগুলো বাংলাদেশের বিখ্যাত হোটেল নামে পরিচিত। এ সব হোটেলগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে এখানকার রান্না করা খাশির ও গরুর মাংশ খেতে। ঐহিত্যবাহী আব্বাস হোটেলে খাসি ছাগলের পরিবর্তে অধিকাংশই মাদী ছাগল রাতের আধারে জবাই করে বিক্রয় করা হচ্ছে।
মাঝে মধ্যে খাদ্য সামগ্রী কম বিক্রয় হওয়ার কারণে মিষ্টির হোটেল গুলোতে ২/৩ দিনের পঁচা-বাসী বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি রেখে বিক্রয় করা হচেছ। তাছাড়া খোলা বাজারে রং মিশ্রিত ভেজাল ও নিম্নমানের পেয়াজী, সিঙ্গড়া, বিভিন্ন ধরনের চপ, ছোলাসহ হরেক রকমের অনুপযোগী খাদ্য বিক্রয় করা হচেছ। ভাতের হোটেল গুলোতে ভেজাল মরিচ ও মশল্লার গুড়ো দিয়ে মাছ, মাংশ ও তরি-তরকারী রান্না করা হচেছ।
প্রায় প্রতিদিনই বাসী মাছ ও মাংশের ঝোলের সাথে পরের দিন নতুন ভাবে রান্না করা মাছ ও মাংশ এর সাথে মিশিয়ে খরিদ্দারের কাছে বিক্রয় করা হচ্ছে। এসব খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে পেটের পীড়া, জন্ডিস ও গ্যাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যধিতে ।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এসব রোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পঁচা-বাসি ও নিম্নমানের খাদ্য বিক্রয়ের অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে সেনেট্যারীর কোন লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ভেজাল কারবার।
এ ব্যাপারে শনিবার সকালে এনামুল হোসেন গাজী নামে একজন ক্রেতা বলেন, বাইরে থেকে দেখতে ভাল ও উন্নতমানের ফার্ণিচার এবং আসবাস পত্র সমূদ্ধ চাকচিক্যপূর্ণ হোটেল রেস্তোরা গুলোর পিছনের দিকে নোংড়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ একেবারে খোলামেলা হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আপত্তি জানালে হোটেল মালিক ও শ্রমিকরা গ্রাহকদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করে।
খুলনার এক আইনজীবি বলেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশের ২৩নং ধারায় বলা হয়েছে দুধ, কেক, রুটি, পরাটা, সামেছা, লুচি, সিংড়া, ডাল, পরাটা, ভাত, মিষ্টান্ন ও অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য বাসী করে বিক্রয় করা যাবে না। আবার ২৪নং ধারার ৩নং উপধারায় বলা হয়েছে, হোটেল রেস্তোরা ও কনফেশনারীর ছাদ, মেঝে, জানালা-দরজা ও অন্যান্য অংশ অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ৪নং উপধারায় বলা হয়েছে, এসব স্থান কোন মানুষের বসবাসের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারবে না। ৮নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হোটেল-রেস্তোরা কনফেশনারী কাজে নিয়োজিত লোকদের অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরা গুলোতে উপরে উল্লেখিত নিয়ম কানুনের কোন বালাই নেই।
এ ব্যাপারে ডুুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা জানি প্রতিটি হোটেল রেস্তোরা গুলোতে পঁচা-বাসী ও নিম্নমানের খাবার বিক্রয় করা হচ্ছে। এ জন্য আমরা ইতোমধ্যে ডুমুরিয়া, শাহাপুর, খর্নিয়া, আঠারমাইল ও চুকনগরসহ কয়েকটি বাজারে বেশ কয়েকবার স্বল্প পরিসরে অভিযান চালিয়েছি। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যেককে সতর্ক করেছি। এরপরেও যদি কেউ অনিয়মের আশ্রয় নেয়, তাহলে আমরা আবারও অভিযান পরিচালনা করবো এবং এসব অসাধু হোটেল ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই