এগারো কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনার ডুমুরিয়ার তালতলা-বাগাচড়া নদী খননের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একতলা-দুইতলা ভবনসহ নানা অবৈধ স্থাপনায় বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে খনন কাজ। কিন্তু সেগুলো উচ্ছেদ হচ্ছে না। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা বলছে, স্থাপনা অপসারণে ম্যানেজ হয়েছে কতৃর্পক্ষ। আর খননে নকশা ও স্টিমেট সঠিকভাবে অনুসরণ হচ্ছে না। ফলে শালতা ও ভদ্রা নদীর মতো বছর না ঘুরতেই ভরাটের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির যে আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা সফল হবে না।
জানা গেছে, সময়ের স্রোতে ধীরে ধীরে খুলনা ডুমুরয়িার তালতলা -বাগাচড়া নদী নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে যায়। ভরাটের সাথে সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নদীর বুকে গড়ে তোলে একতলা ও দুইতলা বাড়িসহ নানা প্রকার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। অনেক স্থানে চাষাবাদও করা হয়। ফলে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় প্ৰতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয় । মানুষকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে , স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন, সেচ ও মাছ চাষে জাইকার অর্থায়নে ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার জুড়ে খনন কাজ শুরু হয়েছে । খননের পর নদীর মুখ ১৩৫ ফুট থেকে ২০০ ফুট পর্যন্ত চওড়া হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, নদীটির উৎস মুখ পশ্চিমে সালতা নদী থেকে গ্যাংরাইল নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীর সুন্দরবুনিয়া ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে খনন কাজ শুরু হয়ছে। সেখানে স্টিমেট অনুযায়ী মুখ চওড়া হবে ১৩৫ ফুট, তলদেশ চওড়া হবে ৫০ ফুট এবং গভীরতা হবে ২০ ফুট।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, খননে সঠিক নিয়ম কানুন অনুসরণ করা হয়নি। এক পাশে চেপে মাঝ বরাবর খনন করে দুই পাড় উঁচু করা হচ্ছে। ফলে শালতা ও ভদ্রা নদীর মতো বছর না ঘুরতেই ভরাটের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া খনন করা মাটি রেকর্ডীয় জমিতে ফেলে ফসলী ধান ক্ষেত নষ্ট করা হচ্ছে। মাটি আবার ভাটা মালিকদের কাছে বিক্রিও করা হচ্ছে। খননকৃত জায়গায় দুটি দুইতলা ও ৪-৫টি একতলা ভবন রয়েছে। তবে বেশকিছু কাঁচা ঘর-বাড়ি ভাঙা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ভবন গুলো ভাঙা হয়নি অথচ কাঁচা ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কাঁচা ঘরে বসবাসকারী মানুষেরা এখন ওপায়ইদা রাস্তার উপর বসবাস করছে।
তাদের অভিমত, সঠিকভাবে খনন হলে নদীতে দেশি প্রজাতির মাছ বংশ বৃদ্ধিসহ কৃষি ও মৎস্য চাষের প্রসার ঘটবে। দরিদ্র মানুষেরা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পাবে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বভিাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান ও প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসনাতুজ্জামান বলেন, স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে তালতলা বাগাচড়া মরা নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। তবে কাজের গতি কম। কাজ শেষ হলে প্রায় তিন দশকের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর হব। খননে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলনে, খননে নকশা ও স্টিমেট সঠিকভাবেই অনুসরণ হচ্ছে। কোন অনিয়ম হবে না।
অবৈধ দখল সর্ম্পকে বলেন, ইতোমধ্যে কিছু উচ্ছেদ করা হয়েছে। ভবন গুলোর অপসারনেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ শামীম আহসান বলেন, বাড়ি গুলো বাঁচাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তেল বেশি খরচ করেও মাটি দুরে ফেলানো হচ্ছে। আর খনন এক এক জায়গায় এক এক রকম ধরা রয়েছে। সেভাবে নিয়মানুযায়ী করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এরআগে ডুমুরিয়ায় ভদ্রা ও শালতা নদী ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খননের বছর না ঘুরতেই ভরাট হয়ে যায়। ভদ্রা ও শালতা নদী ৯টি প্যাকেজে খনন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোং, হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স, কেএসএল জেভি, রানা বিল্ডার্স, সালেহ আহমেদ ও কামরুল এন্টারপ্রাইজ।
প্রতিষ্ঠান গুলো ডিজাইন ও এস্টিমেট অনুযায়ী ভদ্রা নদী দক্ষিণ অংশে ডুমুরিয়ার দিঘলিয়া (স্থানীয় নাম দিঘেলা) থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উত্তারাংশের তেলিগাতি হতে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার খনন করে। এছাড়া শালতা নদীর ডুমুরিয়া বাজারের ভদ্রা নদী থেকে শুরু করে ৯ কিলোমিটার খনন করে শৈলমারি নদীতে সংযুক্ত করা হয়।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদ