পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে জনপ্রতিনিধি। শেষ হচ্ছে মেয়াদ। কোন কোন ইউনিয়নে একই চেয়ারম্যান দ্বিতীয় বার বিজয়ী হচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সচিবও বদলী হয়ে নতুন ব্যক্তি দায়িত্ব নেন। তবুও দেয়া হচ্ছেনা ইউনিয়ন পরিষদের জমির ভূমি উন্নয়ন কর। এমনই চিত্র পাওয়া গেছে খুলনার কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে। উপজেলাটির সবগুলো ইউনিয়নের কর বাকী থাকলেও মহারাজপুর, বাগালী, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বকেয়া রয়েছে যুগের পর যুগ। এছাড়া কয়রা উপজেলার ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হচ্ছে না বেশ কয়েকবছর।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন একাধিকবার ডিমান্ড কার্ড দিয়েও কোন ছাড়া পাচ্ছি না। অপরদিকে কিছু জনপ্রতিনিধি বলছেন ভূমি অফিস থেকে কোন তাগিদ দেয়া হয়নি, জমির কাগজপত্রও তাদের হাতে নেই।
কয়রা উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ভূমি উন্নয়ন কর বাকী রয়েছে মহারাজপুর ইউনিয়নে আর সবচেয়ে কম বাকী রয়েছে কয়রা (সদর) ইউনিয়নে। ১৩৮৪ থেকে ১৪২৯ সন (বাংলা সন) পর্যন্ত কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি উন্নয়ন কর দেয়া হয়না। এই ইউনিয়নে ৪৪ হাজার ৩৪৫ টাকা কর বাকি রয়েছে। বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের ১৩৯৭ থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৪৯৯ টাকা কর বাকী রয়েছে। উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে ১৩৯২ থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত ২২ হাজার ৯৫৩ টাকা কর বাকী রয়েছে। দক্ষিণ বেদকাশী ১৩৯২ থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭৬১ টাকা কর বাকী রয়েছে। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে ১৪২৫ থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৬৯ টাকা, আমাদী ইউনিয়নে ১৪২৬ থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৮ টাকা ও কয়রা ইউনিয়নে ১৪২৭ থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত এক হাজার ৫২ টাকা বাকী রয়েছে।
কয়রা উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সর্বমোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৭ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর বাকী রয়েছে। এ উপজেলায় চলতি অর্থ বছরে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৯৩ হাজার ৩৪২ টাকা। সাত মাসে আদায় হয়েছে ৬৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৩ টাকা। গত অর্থ বছরে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৪ টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার ৮৪ শতাংশ আদায় হয়েছিল।
উত্তর বেদকাশী ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো: জালাল উদ্দিন বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি বছর ডিমান্ড কার্ড দেয়া হয়। আর ব্যক্তিমালিকানা কর আদায়ের জন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছের আলি মোড়ল বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখনও ইউনিয়ন পরিষদের জমির কাগজপত্র পাইনি। কাগজপত্র সংগ্রহ করে খাজনা পরিশোধের জন্য সচিবকে বলেছি। তিনি জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে জমির খাজনা বাকির বিষয়ে তাকে কখনও জানানো হয়নি।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। আমার সময়ের অনেক আগে থেকে কর দেওয়া হয়না। আমি উদ্যোগ নিয়েছি কর পরিশোধের জন্য। সামনের বাজেটে পরিশোধের চেষ্টা করবো। আর তৃণমূলের প্রতিষ্ঠান হিসেবে যদি সরকার মাফ করে তাহলে ভিন্নকথা।
বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী বলেন, আমার আগে যারা ছিলেন তারা কর দেননি। এখন বকেয়াসহ আমাকে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে তার পরামর্শ অনুযায়ী কর দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম সরদার গতবারও চেয়ারম্যান ছিলেন। এবারও নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া সম্ভব হয়নি।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার-ভূমি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোঃ মমিনুর রহমান বলেন, আজই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। পরিশোধযোগ্য হলে এতদিন বাকী থাকবে কেন?
খুলনা গেজেট/কেডি