খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  খা‌লিশপু‌রের হা‌সিবুর হত্যায় ২১ জনের যাবজ্জীবন, খালাস ৫

টিসিবির পণ্য ক্রয়ে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের ভিড়, অনিয়মের কারণে দুর্ভোগে গ্রাহকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সকাল তখন নয়টা, খুলনার নতুন বাজার সংলগ্ন পিচঢালা রাস্তার পাশে বাজারের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মহিলা রোকেয়া বেগম। গতকাল টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য সিরিয়াল দিলেও শেষ হয়ে যাওয়ায় খালি হাতেই বাড়িতে ফিরতে হয় তাকে। সেজন্য আজ সকাল-সকাল চলে এসেছেন লাইনে দাঁড়িয়ে। শুধু রোকেয়া বেগমই নন, ব্যাগ হাতে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকেই, নানা বয়সী নারী পুরুষসহ মাদ্রাসা ও এতিমখানার বাচ্চারাও এসেছে টিসিবির তেল, ডাল, চিনি কেনার জন্য।

মহামারী করোনার সংক্রমণের  পর থেকে সম্প্রতি চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তাই প্রতিনিয়ত টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য দীর্ঘ লাইনে বাড়ছে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের  ভিড়।

প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে খুলনার শিববাড়ী মোড়, খালিশপুর লাল হাসপাতাল, সাত রাস্তার মোড়, নতুন বাজার, ক্রিসেন্ট জুটমিল, হাজী মহাসিন রোড, সার্কিট হাউজ রোড, স্টেশন রোড, জেলা পরিষদের সামনের এই ৯টি স্পটে ট্রাকের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে বিক্রিহচ্ছে চিনি, মুশুরের ডাল, সয়াবিন তেল এবং পেঁয়াজ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল কার্যক্রমে চিনি প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মশুরির ডাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৯০ টাকা ও পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

টিসিবি পণ্যের নতুন বাজার এলাকার ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের ডিলার সৈকত জানান, করোনার পর থেকেই সরকার টিসিবির পণ্য বিতরণ করছে। তবে মুজিববর্ষে প্রতিটি পণ্যের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সকলেই তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রয় করতে পারছে। তিনি আরো জানান, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে পহেলা এপ্রিল থেকেই অন্যান্য পণ্যের সাথে ছোলা ও খেজুর বিক্রয় শুরু হবে।

টিসিবির পণ্য বিক্রয়ের কয়েকটি স্পটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনার এই সময়েও টিসিবির ট্রাকের পিছনে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুদের ভীড় রয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছে না, অধিকাংশই মাস্কও ব্যবহার করেনি। সেই সাথে লম্বা লাইনের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কোনো শৃঙ্খলাকর্মী না থাকায় অনেক নারীকেই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

টিসিবির বিক্রয়ের স্পট গুলোতে করোনাকালীন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থবিধির বিষয়টি জানতে খুলনা টিসিবির উপ-উর্দ্ধতন কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমানের জানান, একাধিকবার ডিলারদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে ও মাস্ক পরার বিষয়টি সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই সাথে ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে তিন ফুট দূরে দূরে সাইকেলের টায়ার বা লাল দাগে দিয়ে স্থান চিহ্নিত করে দেওয়ার বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সকলকে। তবে যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নতুন বাজার এলাকার টিসিবির ট্রাকের পাশে ১৭ মাসের শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আসমা বেগম জানাচ্ছিলেন, করোনার আতঙ্কে শিশু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। সেই সাথে অভিযোগ করেন, ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো আইন শৃঙ্খলার সদস্য না থাকায় অনেকেই একাধিকবার পণ্য ক্রয় করছে এবং সে সকল পণ্য বেশি দামে বাজারে বিক্রয় করছে।

অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে নতুন বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায় ‘মেসার্স মাহবুব ষ্টোরে’ সাজিয়ে রাখা হয়েছে টিসিবির নামাঙ্কিত সয়াবিন তেলের বোতল, যার প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। এছাড়াও দেখা যায় ঐ বাজারের ৮৪ নাম্বার দোকানের মালিক কয়েকজন পুরুষ ও মহিলার কাছ থেকে টিসিবির ট্রাক থেকে ক্রয় করা তেল, চিনি ও মশুরের ডাল নিজ দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে ক্রয় করছেন।

টিসিবির পণ্য খোলা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করার বিষয়টি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোঃ ইব্রাহীম হোসেনকে জানালে তিনি বলেন, টিসিবির পণ্য বাইরের বাজারে বিক্রয় করা অবৈধ। এ সকল কাজের সাথে যে ব্যবসায়ী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে টিসিবির সাথে সমন্বয় করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

টিসিবির মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কম দামে ক্রয়ের সুযোগ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনলেও, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে স্বাস্থ্যঝুকি ও সেই সাথে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে অনেক ক্রেতাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, এ সকল অনিয়ম বন্ধে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও পণ্য ক্রয়ের জন্য আসা ক্রেতাদের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে স্বস্তিতে টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে পারবেন সকলে।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!