খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি

টিসিবির ট্রাক সিন্ডিকেটের কবলে, দূর্ভোগে সাধারণ ক্রেতা (ভিডিও)

সাগর জাহিদুল

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টা। খুলনা সেন্ট যোসেফস স্কুলের উত্তর সীমানায় তিন বছরের শিশু আবিদকে নিয়ে রোদের মধ্যে দাড়িয়ে ছিল রিনা আহমেদ। উদ্দেশ্যে টিসিবি’র পণ্য ক্রয় করা। কিন্তু দেড় ঘন্টার বেশী সময় দাঁড়িয়ে থাকায় সেই অপেক্ষার শেষ হচ্ছিল না তার। কারণ ট্রাকসেল গুলোতে গড়ে উঠেছে অসাধু সিন্ডিকেট চক্র। আর তাদের কারণে অনেক সময় অপেক্ষা করেও পণ্য নিতে পারেননি তিনি।

দুপুর দেড়টার দিকে টুটপাড়া টিসিবি পণ্য বিতরণ কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন আমেনা বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সকাল ৯টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে এখনও পণ্য কিনতে পারেননি। সেখানে গিয়ে জানা গেল সিন্ডিকেট চক্র নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত পণ্য গ্রহণের কারণে সাধারণ মানুষ লাইনে দাড়িয়েও মাল পাচ্ছেন না।

আজ বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে সুলভ মূল্যে সরকারি সংস্থা টিসিবি’র মাধ্যমে তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করা হয়। ফলে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট চক্রটি।

সেন্ট যোসেফস স্কুলের পাশের ট্রাকসেল পয়েন্টের ট্রাককে ঘিরে অনেক মানুষের ভিড়। ভিড়কে উপেক্ষা করে এক ব্যক্তি টিসিবি’র পণ্য নিচ্ছেন। ট্রাকে থাকা কর্মচারীরা নিশ্চুপ থেকে তাকে মাল বুঝে দিচ্ছেন।

জানা যায়, ওই ট্রাকের এক কর্মচারি ওই ব্যক্তির বন্ধু হওয়ায় পুরো ট্রাকের পণ্য বিতরণে যেন ওই ব্যক্তির অলিখিত দখল চলছে। তার বাড়ি রূপসা উপজেলার রহিমনগর গ্রামে। জানা যায়, রহিমনগরের প্রায় ২০ জন পুরুষ-মহিলা এ চক্রের সাথে জড়িত। শুধু রাহিমনগর নয়, নগরীর নতুনবাজার বস্তি, জেলখানা ঘাট, গল্লামারী, বয়রা মহিলা কলেজ, সোনাডাঙ্গা মেলার মাঠসহ কয়েক এলাকায় রয়েছে এমন ভিন্ন ভিন্ন সিন্ডিকেট গ্রুপ।

টিসিবির ওই ট্রাকের পরিচালক মো: শফিউল্লাহ এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ওই ব্যক্তি ছাড়াও  নগরীর আরও কয়েকজন আছেন, তাদের ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারিনা। তিনি জানান, নতুনবাজার এলাকার কয়েকজন এসে এখানে মহিলাদের সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এমন কি মহিলাদের মারতেও যায় তারা। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

টিসিবি পণ্য ক্রয় করতে আসা রুবি বেগম, পিকচার প্যালেস মোড় অগ্রণী ব্যাকের ঝড়ৃদার। তিনি অভিযোগ করে বলেন,  এই চক্রের এক পুরুষ ও দুই নারী সদস্য আহসান আহমেদ রোডের এ পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের উদ্দেশ্যে কম দামে পণ্য ক্রয় করে বেশি লাভে দোকানে বিক্রি করা। খোঁজ নিলে নগরীর কয়েকটি দোকানে টিসিবি’র তেল পাওয়া যাবে। তাছাড়া ডিলারদের সাথেও তাদের যোগসাজেশ আছে। পণ্য বিক্রির ঘোষণা হওয়া মাত্রই হাজির হয় এ চক্রটি। তাদের কারণে টিসিবির মাল পাওয়া খুবই কষ্টকর।

দুপুর একটার দিকে টুটপাড়া কবরস্থান সংলগ্ন ভুতের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল একই অবস্থা। সেখানে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করছিল মা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো নানা অনিয়মের কথা জানায়।

সেখানে দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে থাকা রিনা বেগম নামের এক নারী সরাসরি ট্রাকে থাকা এক কর্মচারীর দিকে অভিযোগ তুলে জানালেন সে চক্রদের পণ্য দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, ট্রাকের কর্মচারীরা ঝামেলা এড়াতে ও দ্রুত বিক্রি শেষ করতে সিন্ডিকেটের কাছে মাল বিক্রি করে দেয়। এসব সিন্ডিকেট সদস্যদের ডিলারদের আগে থেকেই যোগাযোগ থাকে।

রহিম নামের ওই কর্মচারীর নিকট জিজ্ঞাসা করতে তিনি অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করে দেয়। ডিলারকে তখন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া দেখা যায় ওই কর্মচারী চোখের ইশারায় চক্রটির সদস্যকে সরে যেতে বলে।

এসময় টিসিবির সিরিয়ালে চোখেপড়ে কয়েকজন কিশোরকে। তাদের সাথে কথা হলে জানা যায়, তাদের কাজ হল লাইনে দাড়িয়ে পণ্য সংগ্রহ করা ও ২০ টাকা লাভে চক্রটির হাতে মালামাল বুঝিয়ে দেওয়া।

আমেনা বেগম মিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি চক্রটির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ২০ টাকা লাভে তারা দোকানে মাল বিক্রি করছেন। টুটপাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান চালালে টিসিবি’র তেল পাওয়া যাবে। তাছাড়া এই এলাকার সরকার পাড়ার একটি বাড়িকে গোডাউন বানিয়েছে তারা। ওই বাড়িটি ঘিরে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট চক্র। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তদারকির জন্য অনুরোধ করেছেন।

তবে টিসিবির ট্রাকসেলের কয়েকজন ডিলারদের সাথে কথা হলে তারা সিন্ডিকেটের বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা জানান, ভীড়ের মধ্যে মানুষের চেহারা মনে রাখা সম্ভব হয় না। যদি এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিতরণের নিয়ম করা হয় তাহলে এই সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!