প্রিয়জন হারানোর বেদনা কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ করার বিষয়টি সেই আদিকাল থেকে। মরদেহের পাশে আহাজারি করে কেঁদে শোক প্রকাশ করার দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে।
কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছেন যারা অর্থের বিনিময়ে কেঁদে বুক ভাসান। মৃত মানুষের জন্য শোক দেখানোই তাদের পেশা। ইংরেজিতে তাদের বলা হয় প্রফেশনাল মোর্নার্স বা মৈরোলজিস্টস (moirologists). সবচেয়ে আজব বিষয়, যে মানুষটির জন্য তারা কেঁদে বুক ভাসান তার সঙ্গে হয়তো জীবনে দেখাও হয়নি তাদের।
টাকার বিনিময়ে কান্নাকাটির এই পেশা অনেকদিন থেকেই চলে আসছে। মিশর, চীনসহ ভূমধ্যসাগরীয় কিছু অঞ্চলে এই পেশার মানুষদের দেখতে পাওয়া যায়। মৃত স্বজনের প্রতি শোক প্রকাশ ও শেষ শ্রদ্ধা জানানোর মানুষের কমতি হতে পারে বলে যারা মনে করেন তারাই ভাড়া করে আনেন এই পেশার মানুষদের। এক্ষেত্রে নারীদেরকেই বেশি ভাড়া করা হয়। সাধারণত মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন অপূর্ণ ইচ্ছা, দুঃখ, কষ্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিলাপ করে শোক প্রকাশ করে তারা। এছাড়া বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্নতা অনুযায়ী তাদের শোক প্রকাশের ধরনে পার্থক্য দেখা যায়। অনেক স্থানে অতিমাত্রায় বিলাপ করে কান্নাকাটির রীতি প্রচলিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই পেশাজীবীরা অতিমাত্রায় বিলাপ করে কান্নাকাটি শুরু করেন।
একজন পেশাদার মোর্নার আধাঘণ্টা বা এক ঘণ্টার শোক প্রকাশ করে হাজারের ওপর আয় করতে পারেন। ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে এই পেশার একজন বলেন, ‘এটা আমার শখ। আমি অনেক ছোটবেলায় এটি শুরু করি। গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করছি।’
চীনের হেনান প্রদেশের বাসিন্দা এই ব্যক্তি আরো বলেন, ‘এটি করে সংসার চালাতে আমার মোটেও কোনো কষ্ট হয় না। এই পেশায় থেকে আমি একটি বাড়ি কিনেছি। আমার দুই সন্তানকে লালন পালন করছি।’
জানা যায়, অষ্টম শতকের দিকে চীনে এই শ্রেণীর মানুষ ছিলেন। বাইবেলেও এই পেশার মানুষের উল্লেখ রয়েছে। ভিক্টোরিয়ান যুগে এদের বলা হতো ‘মিউটস’। ধনী ব্যক্তিরা তাদের আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে বেশি মানুষের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য এদের ভাড়া করতেন। যদিও সেই সময়ে এই পেশার মানুষরা একটু শান্তভাবে শোক প্রকাশ করতেন। লেখক চার্লস ডিকেন্স তার ‘অলিভার টুইস্ট’ বইতে এই শ্রেণীর মানুষের উল্লেখ করেছেন।
খুলনা গেজেট/কেএম