যশোরের ঝিকরগাছায় খুনসহ ডাকাতি এবং যশোর শহরের তিনটি দোকানে চুরির ঘটনার সাথে জড়িত ১২ জনকে আটক করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ। ডিবির ওসি রুপন কুমার সরকারের নেতৃত্বে একদল সদস্য কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, বরিশাল, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ট্রাক জব্দ করা হয়েছে । বুধবার যশোর পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
আটককৃতরা হলেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার উত্তমপুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে শাওন ইসলাম সোহাগ, পটুয়াখালী সদর উপজেলার শেখহাটি গ্রামের লোকমান মৃধার ছেলে মাহাতাব মৃধা, একই এলাকার সিরাজ খাঁর ছেলে রিয়াজ খাঁ, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিহারীপুর গ্রামের মৃত কাঞ্চন তালুকদারের ছেলে শামীম তালুকদার, নন্দপুর গ্রামের কবির মোল্লার ছেলে মাসুম মোল্লা, বীরাদ্দন গ্রামের ফজলু হাওলাদারের ছেলে সবুজ হাওলাদার, বিহারীপুর গ্রামের ইব্রাহিম খানের ছেলে শহিদুল খান, শ্যামপুর গ্রামের মোক্তার সিকদারের ছেলে শিপন সিকদার, পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের শাহজান সিকদারের ছেলে সোহাগ সিকদার, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর গ্রামের ইমদাদুল শেখের ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাসেল, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার জিবদারা গ্রামের সোবাহান খানের ছেলে এনামুল খান, ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ববন্ধ ডাকপাড়া গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে এমাদুল ইসলাম।
এদের মধ্যে রাসেল, এনামুল, শিপন সিকদার ও এমাদুল ডাকাতি ও চোরাইপণ্য কেনাবেচার সাথে জড়িত, অপর আটজন সরাসরি ডাকাতি ও চুরির সাথে জড়িত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বুধবার বিকাল চারটায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, সংঘবদ্ধ চক্রটি নিজেদের ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়ায়। যেখানে চুরির সুযোগ পায়, সেখান থেকে তারা চুরি করে। এছাড়া, সুযোগ পেলে ডাকাতি করে ওইসব পণ্য ট্রাকে করে ওই জেলা থেকে অন্য জেলায় সটকে পড়ে।
পরে সেসব পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার বা সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে বিক্রি করে। একইভাবে গত ১৩ আগষ্ট রাতে তারা ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর রাজাপট্টির ঝিকরগাছা অটো ইলেকট্রনিক্যাল ওয়ার্কসে তারা ডাকাতি করে। এসময় নৈশ প্রহরী আব্দুস সামাদকে শ্বাসরোধে হত্যা করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। অনুরুপভাবে যশোর শহরের উপশহর এলাকার সিকদার মটরস থেকে ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকার মালামাল, মুড়লি মোড়ের মেসার্স কর্নফুলী ট্রেডার্স থেকে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ টাকার মালামাল ও বকচরের খাদিজা এন্টারপ্রাইজ থেকে সাত লাখ ৯০ হাজার ২শ’ টাকার মালামাল লুট করে। ওই সব মালামালের মধ্যে ছিলো ব্যাটারি, লুব্রিকেন্টস ও মটর পার্টস।
এসব ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় পৃথক চারটি মামলা হয়। এ মামলাগুলোর তদন্তভার ডিবির উপর দেয়া হয়। এরপর ডিবি পুলিশ অভিযানে নামে। তারা বিভিন্ন জেলায় গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এক পর্যায়ে গত ২৩ আগস্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কে একটি পেট্রোলপাম্পে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে যশোর ডিবি পুলিশ হাতেনাতে ওই ডাকাতদলের সদস্যদের আটক করে।
পরে তারা যশোরের এসব ডাকাতি ও চুরি এবং নৈশ প্রহরীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তিতে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকার চোরাই পণ্য, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে ঝিকরগাছা থেকে ডাকাতি হওয়া দুই লাখ ২০ হাজার টাকার ব্যাটারি, উপশহর থেকে চুরি হওয়া তিন লাখ চার হাজার ৭শ’ ২০ টাকার লুব্রিকেন্ট, বকচর থেকে চুরি হওয়া পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার টাকার ২১টি টায়ার, মুড়লি মোড় থেকে চুরি হওয়া এক লাখ ৮৪ হাজার ২শ’৫০ টাকার লুব্রিকেন্ট। এছাড়া একটি ট্রাক ও হত্যায় ব্যবহৃত স্কচটেপ ও ১২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার জানান, আটক ১২ আসামিকে থানায় দায়েরকৃত চারটি মামলায় আটক দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে ডাকাতি ও হত্যায় জড়িত কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। অন্যদের জবানবন্দি গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
খুলনা গেজেট/এইচআরডি