জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে অস্থির হয়ে উঠেছে খুলনার চালের বাজার। খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৮ টাকা। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালের এ মূল্য বৃদ্ধি। থেমে নেই পেঁয়াজের দামও। চাল ও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে নতুন করে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন নগরীর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রতিকেজি বাঁশমতি চাল ৮৪ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা দোকানীরা। অনুরুপভাবে মিনিকেট সরু ৭২ টাকা, ইরি ২৮ চাল ৬০ টাকা, ২৮ লোকাল ৬০ টাকা, গাজী আতপ ৪০ টাকা ও স্বর্ণা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির আগে প্রতিকেজি বাঁশমতি চাল ৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে মিনিকেট সরু ৬৮ টকা, ২৮ ইরি ৫২ টাকা, ২৮ লোকাল ৫৬ টাকা, গাজী আতপ ৩৮ টাকা ও স্বর্ণা ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী কুন্ডু এন্টারপ্রাইজের মালিক বাসুদেব কুন্ডু বলেন, বাজারে আগে থেকে এলসি চালের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তারপর বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। পরিবহন খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। মিল মালিকরা চাল উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। চালের মূল্য বাড়তি হওয়ার কথা জানতে চাইলে মিল মালিকরা বলছেন, ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বর্ধিত দরে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে।
একই বাজারের অপর ব্যবসায়ী গোবিন্দ কুন্ডু বলেন, প্রতিবছর এ সময় এলে চালের দাম বাড়ে। এর দাম কমতে প্রতিবেশী দেশ থেকে চাল আমদানি করা হয়। ডলারের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় এবার অনেকের চাল আমদানিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। দেশীর মার্কেট থেকে চাল সরবরাহ করা হলেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি হওয়ায় এ পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। তাছাড়া বাজারে নামে মাত্র এলসির চাল রয়েছে বলে তিনি অকপটে স্বীকার করেন।
অপর ব্যবসায়ী বলেন, এমনিতো এলসির চাল বাজারে নেই। তারপর মিল মালিকরা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মিল মালিকদের সে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। চাল কল মালিকরা আগে থেকে কম মূল্যে ধান কিনে মজুদ রেখেছিল দাম বৃদ্ধির আসায়। তাদের সে স্বার্থ হাসিল হয়েছে। তিনি উত্তর বঙ্গ ও বড় বড় মিলগুলোতে অভিযানের কথা বলেছেন। না হলে এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রূপসা বাজারের চাল বিক্রেতা নান্টু বলেন, প্রতিটা পণ্যের দাম বেড়েছে। তাকে বড় বাজারের মোকাম থেকে বর্ধিত দরে মাল কিনে এ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পুরানো সিন্ডিকেট আবারও মাথা চড়া দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে পোঁয়াজের ঝাঁজ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিকেজি দেশী পেয়াজ ৪০ টাকা ও এলসি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
বড়বাজারের পাইকারী বিক্রেতা মো: কামরুল ইসলাম বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে এলসি পেঁয়াজের দাম ২৭ টাকার স্থলে ২৯ টাকায় বিক্রি করছেন। অপরদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে দেশী পেঁয়াজের দাম। প্রতিকেজিতে ৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো: মাসুদ রানা বলেন, পরিবহন ভাড়া বেশী হওয়ায় তাকে আড়ত থেকে পেঁয়াজ বর্ধিত দরে কিনতে হচ্ছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। অথচ গত ৫ দিন আগে একই পেঁয়াজ তিনি ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছেন।
পণ্য পরিবহন চালকদের ভাষ্য মতে, বেড়েছে ডিজেলের দাম। পণ্য পরিবহনে মোকামের মালিকরা তাদের শ্রমের মূল্য বাড়ায়নি।
চালক মো: আরিফ শিকদার বলেন, রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে খুলনায় আসতে ১২০ লিটার তেলের প্রয়োজন হতো। সে সময় সব খরচসহ ৯ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয় হতো। কিন্তু এখন একই পরিমাণ তেলে ১৩ হাজার ৬৮০ টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। বর্ধিত টাকা না পেয়ে অনেক মালিক তাদের পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই