খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা
বাস্তুসংস্থান প্রণালী ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা

জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চলে কমছে পানি, মরছে গাছ : হুমকির মুখে পরিবেশ

শাহিন আহমেদ

যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলে দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। চলতি শুষ্ক মৌসুমে জলাবদ্ধ অঞ্চলে পানি যতই কমতে শুরু করেছে ততই পরিবেশ বিপর্যয় চোখে পড়ছে। মরতে শুরু করেছে গাছ পালা। ভেঙ্গে পড়ছে বাস্তুসংস্থান প্রণালী। গাছ শূন্য হতে চলেছে ভবদহ অঞ্চল।

এলাকাবাসি জানায়, এ বছর পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, ছবেদা, শিরিশ, মেহগনি, বাঁশ, সুপারি, কলা গাছ, পেঁপে, ডালিম, পেয়ারা, লেবু, কদবেল, আঁতা, ইত্যাদি গাছ মারা যাচ্ছে। প্রতিটি গাছের গোড়ায় পচন ধরে মরতে বসেছে। পাতা ও ডালপালা শুকিয়ে গেছে অধিকাংশ গাছের। ফলে এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করেছেন তারা।

বুধবার সরেজমিনে, অভয়নগর ও মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

অভয়নগর উপজেলার বেদভিটা গ্রামের শিক্ষক আনন্দ মন্ডল বলেন, আমার বাড়ির আঙ্গিনায় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, ছবেদা, বাঁশ গাছ মারা গেছে।

ডুমুরতলা গ্রামের অনিমেষ বিশ্বাস জানায়, এ বছর আমি মেহগনি, পেয়ারা ও আম গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে ছিলাম কিন্তু জলাবদ্ধতা দীর্ঘ স্থায়ী হওয়ার কারণে একটা গাছও বেঁচে নেই। শুধু তাই নয় আমাদের গ্রামের অধিকাংশ লোকের বাড়ির ফলজ ও বনজ গাছ মারা গেছে।

মণিরামপুর উপজেলার হাটগাছা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নারায়ন চন্দ্র মল্লিক জানান, আমাদের বাড়ির অধিকাংশ গাছ মারা গেছে। এমনকি অনেক পুরাতন বাঁশ ঝাড়ের গাছ এ বছর মারা গেছে। তাল, নারিকেল গাছ বর্তমান মরনাপন্ন অবস্থায় আছে। বাড়ি প্রায় গাছ শূন্য হতে চলেছে। ভবদহের সমস্যা সমাধান না করা হলে ভবিষ্যতে এ সকল এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় এতটা মারাত্মক পর্যায়ে পৌছাতে পারে যেখানে মানুষের বসবাস দুঃসাধ্য হয়ে দেখা দিতে পারে। এমন আশংকা পরিবেশবিদদের।

হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত বছর স্কুলের আঙ্গিনায় সরকার প্রদত্ত অনেক গাছ লাগিয়েছিলাম কিন্তু একটি গাছও বেঁচে নেই বরং পুরাতন বড় বড় শিরিশ গাছ মরনাপন্ন অবস্থায় আছে। স্কুলের মাঠ থেকে এবছর এখনও পানি নামেনি। পানি নামলে বোঝা যাবে বড় বড় শিরিশ গাছগুলো মরবে কিনা।

শিক্ষক সবিতা বিশ্বাস জানায়, চারিদিকের গাছ মারা যাওয়ার কারণে উত্তরের বাতাস সরাসরি ঘরে এসে লাগছে। যে কারণে এলাকার মানুষ এ বছর বেশি শীত ভোগ করছে।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য শৈলেন্দ্রনাথ বৈরাগী বলেন, এ বছর জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ স্থায়ী হয়েছে। যে কারণে আমার বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো গত বছরের গাছ মারা গেছে। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ লোকের বাড়ির আঙ্গিনার গাছ মারা গেছে। বর্ষা মৌসুমীতে চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। আর এখন পানি কমে যাওয়ায় চারিদিক শুধু মৃত গাছ আর গাছ দেখা যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় বলেন, এ অঞ্চলে নতুন গাছ জন্মাচ্ছে না। আবার লাগানো গাছ মারা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন ভবদহ অঞ্চল গাছ শূণ্য হয়ে যাবে। হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ।

অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, অধিকাংশ লোকের বাড়ির আঙ্গিনার গাছ মারা যাচ্ছে। আমরা পরির্দশনে যেয়ে দেখবো। কি পরিমাণ গাছের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ভবদহের এলাকায় হয়তোবা নোনা পানি ঢুকেছে। যে কারণে গাছ মরতে পারে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!