দীর্ঘ ছয় মাস অতিবাহিত হলেও দৌলতপুর ওহাব জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ ফারুক হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় লুট হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়ের করা হলে ১১ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে দু’জন ডাকতিতে সরাসরি অংশগ্রহণের কথা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে। সেখানে মূল পরিকল্পনাকারীর নাম বললেও পুলিশ এখনও তাকে আটক করতে পারেনি। তবে এলাকাবাসী জানিয়েছে, পরিকল্পনাকারীকে ভারতে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর পাবলা শেখ আব্দুল ওহাব স্মরণীর ৯৫ নং হোল্ডিং ওহাব জুট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বাড়ি। কর্মক্ষেত্রের কারণে তিনি অধিকাংশ সময় খুলনার বাইরে অবস্থান করেন। আত্মীয় স্বজনরা খুলনায় বেড়াতে এলে ওই বাড়িতে থাকেন। বাড়িতে কয়েকজন পাহারাদার ও কেয়ারটেকার আছে।
ঘটনার কয়েকদিন আগে দৌলতপুর এলাকার অনুপ হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি খালাস পেয়ে ওই এলাকায় বনভোজনের আয়োজন করে। সেখানে বসে এ ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়। এ পরিকল্পনায় অংশ নেয় ওই এলাকার জনৈক পরিতোষ। ডাকাতি কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য ম্যানেজ করা হয় ওই বাড়ির পাহারাদার তায়েজকে। সে গেট খুলে দেওয়া মাত্রই সংঘবদ্ধ ডাকাত দল বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে সকলকে জিম্মি করে নগদ টাকাসহ ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকার মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দৌলতপুর থানার এস আই মো: মিজানুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ১১ জন আসামিকে আটক করা হয়েছে। আসামিরা হলো,রাশেদ খান অনিক, ওই বাড়ির পাহারাদার মো: তায়েজ শেখ, মো: হাবিবুর রহমান হাবিব, আসলাম শেখ, শেখ রাহাদ হোসেন, মো: মেহেদী হাসান রকি ওরফে ডেভিড, মো: রুবেল শিয়ালী, মো: নয়ন মাহমুদ, মো: কামরুল ইসলাম ওরফে ডেভিড কাম, রিপন ওরফে এ্যালকো রিপন ও মো: মেহেদী হাসান মমি।
এদের মধ্যে আসামি রাশেদ খান অনিক ও দ্বীপ নামে দু’জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনার মূল হোতা পরিতোষের নামও তারা দু’জনই আদালতকে জানিয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের কাছ থেকে কোন টাকা বা অর্থ উদ্ধার করা যায়নি। ডাকাতির পর লুট করা অর্থ তারা ভাগাভাগি করে নেয়। আর স্বর্ণালংকার পরিতোষের কাছে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া রিপন ওরফে এ্যালকো রিপন দৌলতপুর এলাকার আলোচিত অনুপ হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলায় খালাস পাওয়ার পর দৌলতপুর এলাকায় বনভোজনের আয়োজন করে। সেখানে বসে এ ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়। মামলায় আরও চারজন সন্দেহভাজন আসামি রয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছেনা। তবে পরিকল্পনাকরী পরিতোষকে গ্রেপ্তার করতে পারলে সবকিছু উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তবে এলাকাবাসী জানিয়েছে, ঘটনার পর পরিতোষকে দৌলতপুর পাবলা এলাকায় দেখা গেলেও অদৃৃশ্য কারণে সে সময় তাকে আটক করা হয়নি। পরে জানা গেছে, সে ভারতে পালিয়ে গেছে। কি কারণে তাকে ঐসময় আটক করা হয়নি তা আজও অজানা এলাকাবাসীর কাছে।
উল্লেখ্য ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর রাতে ওহাব জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালাকের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাতর স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকার মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ওই দিন ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে দৌলতপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই