যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী সরকারি শাহাদৎ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। একটি ভবনের ২য় তলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় সেখানে তিনটি কক্ষ বন্ধ রয়েছে। পরিত্যাক্ত ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি পাঠদানের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অভিভাবকরা।
১৯২৯ সালে চৌগাছার কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ১২ দশমিক ৭৪ একর জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর জন্যে ২০টির মত কক্ষ আছে, যার পাঁচটি হচ্ছে মেয়েদের কমন রুম। মানসম্মত শিক্ষাদানে অনন্য ভূমিকা রাখায় চৌগাছা উপজেলা ছাড়াও পাশের বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীরা এখানে লেখাপড়া করেন।
২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টি সরকারি হওয়ার গৌরব অর্জন করলেও নানা কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার ঐতিহ্য যেন হারাতে বসেছে। বিশেষ করে বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পাঠদানের কক্ষ না থাকায় সংকটে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। একটি ক্লাসে একাধিক শাখা থাকলেও শ্রেণিকক্ষের অভাবে অনেক সময় একই কক্ষে পাঠদান করানো হচ্ছে। প্রায় ৫ পাঁচ বছর আগে বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে একটি দ্বিতল ভবনের ওপরের তলা ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। সেখানে তিনটি কক্ষে পাঠদান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। ওই ভবনের নিচতলা কিছুটা ভালো থাকায় সেখানে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। দুর্বল এই ভবনের ২য় তলায় পাঠদান বন্ধ রেখে নিচ তলায় পাঠদান চলায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন অনেকে।
এদিকে বিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রবাস বছরের পর বছর ধরে বন্ধ আছে। ছাত্রাবাসের একাংশের ইট এমনকি জানালা দরজা মিশে গেছে মাটির সাথে। অপর অংশ বিদ্যালয় মসজিদের ইমাম সাহেব কোন রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের একটি ছাত্রবাস খুবই জরুরি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী কষ্ট করে এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে। ছাত্রাবাস চালু হলে তাদের কষ্ট লাঘব হবে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিয়াত বাবু, ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আইরিন জাহান বলে, পরিত্যক্ত ভবনটির পাশ দিয়ে চলাফেরা করতে আমাদের ভয় করে। এছাড়া ওই ভবনের নিচে ক্লাস হয়। যদি কোন কিছু ঘটে যায় তখন তো সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অভিভাবক সেলিম রেজা, শাহিনুর রহমান শাহিন, বিল্লাল হোসেন বলেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম একেএম শফিউদ্দিনের আমলে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ছিলো, কঠোর মনিটরিংও ছিলো। বর্তমান বেশ কয়েক বছর ধরে কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যেন ঘাটতি আছে। একটি ভবন বছরের পর বছর পরিত্যক্ত আছে অথচ এতো নামকরা প্রতিষ্ঠানের ভবন হয়না যা দুঃখজনক। কোমলমতি শিশুরা ভবনের সামনে দিয়ে দৌড়াদৌড়ি, খেলাধুলা করে যদি কখনও দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়ভার কে নেবে?
প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, একটি নতুন ভবনের জন্যে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় আবেদন করেছি। তবে এখনও কোন সুসংবাদ পাইনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরুফা সুলতানা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সরকারি। তাই বেশ কিছু নিয়মের মধ্যেই সেখানে সকল উন্নয়ন কাজ করতে হবে। পরিত্যক্ত ভবনের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বের কিছুটা ঘাটতি আছে বলে আমি মনে করি। তবে চেষ্টা চলছে সময় মতো সব ঠিক হয়ে যাবে।
খুলনা গেজেট/এসজেড