চৌগাছায় সরকারি শাহাদৎ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের বেহাল দশা। প্রায় দেড় যুগ ধরে এটি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ কক্ষে সাপ পোকা মাকড় বাসা বেঁধেছে। তাই স্কুল খোলার সাথে সাথে ছাত্রাবাসটি চালু করার দাবি উপজেলার সচেতন মহলের।
১৯২৯ সালে চৌগাছার কিছু শিক্ষানুরাগী বর্তমান উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে ও মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ১২ একর ৭৩ শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এই বিদ্যালয় আলো ছড়াতে শুরু করে যা আজও বিদ্যমান আছে। এখান থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই দেশ বিদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর দূরের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে একটি ছাত্রাবাস নির্মিত হয়, নামকরণ করা হয় মোবারক আলী ছাত্রাবাস।
১০/১২টি কক্ষ বিশিষ্ট ছাত্রাবাসে নিয়মিত ৩০/৩৫ জন গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতো। আর ছাত্রবাস পরিচালনা করতেন সে সময়ের বেশ কিছু দক্ষ, অভিক্ষ শিক্ষক, যাদের অনেকেই আজও জীবিত আছেন। কিন্তু ২০০৪ সালের দিকে ছাত্রাবাসটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় যা এখনও পর্যন্ত বন্ধ আছে। বছরের পর বছর বন্ধ থাকায় এখানে সাপ পোকা মাকড়ের বাসা বেঁধেছে, আর সামনের কিছু অংশে বসবাস করছেন স্কুল মসজিদের ইমাম ও পরিচ্ছন্নকর্মী। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যার বেশির ভাগই উপজেলার দূর দূরান্তের। অনেকে পৌর সদরের বিভিন্ন মালিকানা ছাত্রাবাস কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি মডেল এমনকি সরকারি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের সুনামের পেছনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম একেএম শফিউদ্দিন। তিনি ২০০৩ সালের ১ নভেম্বর অবসরে যাওয়ার পর হতে সৃষ্টি হয় নানা সংকট। ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বে থেকে সাবেক প্রধাান শিক্ষক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি ছাত্রাবাসটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন। সাবেক সহকারী শিক্ষক আব্দুস সামাদ, হেলাল উদ্দিন, মিজানুর রহমান মৃধা, হবিবর রহমান পর্যায়ক্রমে ছাত্রাবাসের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করে অনেক ছাত্র আজ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। কিন্তু আজ সব কিছুই যেন স্মৃতি।
বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বর্তমান চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল বলেন, ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে সরকারি পাইলট হাইস্কুল, কেননা ২০২৯ সাল এলেই শতবর্ষ পূর্ণ হবে। এমন একটি বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস থাকা জরুরি। যেহেতু প্রতিষ্ঠান এখন সরকারি তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করছি।
প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসটি চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা দূরের অনেক শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করে, ছাত্রাবাস চালু থাকলে তাদের জন্য সুবিধা হবে। তবে ছাত্রাবাসের আগে প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন দরকার, দরকার ক্লাস রুম। সব বিষয়ে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
খুলনা গেজেট/এনএম