যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী গ্রাম জগদীশপুর। সেই ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করে রেখেছে শতাধিক বছরের পুরনো তেঁতুলগাছ। বিশাল আকৃতির এই তেঁতুল গাছ গ্রামের সার্বিক পরিবেশকে মনোমুগ্ধ করে রেখেছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
উপজেলা সদরের পূর্ব উত্তর কোনে জগদীশপুর গ্রামের অবস্থান, যার দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। চৌগাছা থেকে জগদীশপুরের দিকে রওনা হয়ে মুক্তদাহ মোড় ঘুরেই চলতে হবে কাংখিত গ্রামের দিকে। সাপের চলার পথের মত আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দেখা মিলবে বসতবাড়ি আবার ফাঁকা মাঠ। সড়কের দুই পাশে রয়েছে সবুজের সমারহ- বাঁশঝাড়, কলা আর আম বাগান।
জগদীশপুর গ্রামে প্রবেশ করেই সড়কের দুই পাশে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে বিশাল তেঁতুল গাছ। গ্রামবাসী এ সব গাছের গোড়ায় ইট সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে রেখেছে। শুধু তাই না সেই পাকা অংশ টাইলস দিয়ে বসার উপযোগী করে রেখেছেন। গ্রামের একাধিক বয়োবৃদ্ধ জানান, গ্রামের সব থেকে বেশি বয়সে মারা গেছেন ডা. এহিয়া। তিনি ১শ বছরের বেশি বয়সে মারা যান। এহিয়া ডাক্তার সেই সময়ে বলে গেছেন, তিনি জন্মের পর কিছুটা বুঝতে শিখে তেঁতুল গাছকে বর্তমান যেমনটি আছে ওই ধরনেরই দেখে এসেছেন। একটি গাছের বয়স কত হবে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেন নি।
গ্রামের বাসিন্দা রোকনুজ্জামান বলেন, আমার বাড়ির সামনেই ৪টি বিশাল আকৃতির তেঁতুল গাছ রয়েছে। অধিকাংশ গ্রামের গোড়া পাকা করা হয়েছে যাতে করে মানুষ এখানে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। একাধিক গাছ এক জায়গায় হওয়ার ফলে স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে তেঁতুলতলা। পাশেই অবস্থিত জগদীশপুর কৃষি ব্যাংক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কিছু দূর হেঁটে চলার পর দেখা মিলবে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ তুলা গবেষণা ও বীজ বর্ধন খামার। নানা কারণে জগদীশপুর গ্রাম ঐতিহ্যপূর্ণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
ইউপি সদস্য মজনুর রহমান বলেন, জন্মের পর হতে তেঁতুলগাছগুলোকে যেমন দেখেছি, আজও ঠিক সেই রকম দেখছি। অনেক বয়সে গ্রামের যারা মারা গেছেন তাদের মুখে শুনেছি এক একটি গাছের বয়স ৬ থেকে ৭শ বছর হবে। এত বয়সের গাছ এখনও সমানভাবে ফল দিয়ে যাচ্ছে। অন্য যে কোন তেঁতুলগাছের তুঁতুলের চেয়ে এই গাছের তেঁতুলের স্বাদ বেশি।
স্থানীয়রা জানান, শত বছরের পুরনো তেঁতুল গাছ যেমনটি আমাদের ঐহিত্য, তেমনিভাবে এই গ্রামেই অবস্থিত তুলা ফার্ম আমাদের গর্ব ও অহংকারের একটি প্রতিষ্ঠান। কেননা এই মাটিতে পা রেখেছেন বাংলাদেশের শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার কল্যাণে এখানে প্রতিষ্ঠত হয় তুলা ফার্ম। যা বর্তমানে দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ তুলা গবেষণা ও বীজ বর্ধন খামারের মুকুট পরে আছে। আমরা গর্বিত জগদীশপুর গ্রামের কৃতী সন্তান সাবেক সচিব ও রাষ্ট্র্রদূত এম মনিরুজ্জামান, সাবেক সচিব ইমদাদুদ দোস্তগীর, মরহুম এহিয়া ডাক্তার, সাবেক কমিশনার (খুলনা বিভাগ) মরহুম শামছুল হুদার মতো মানুষের জন্মস্থান এই গ্রামে হওয়ার কারণে।
জগদীশপুর গ্রামের কৃতী সন্তান বর্তমান পর্যাটন মন্ত্রনালয়ের নির্বাহী অফিসার এম মুস্তাদুদ দোস্তগীর জানান, ঐতিহ্যবাহি তেঁতুল গাছগুলো পর্যাটন মন্ত্রণায়ের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।