চৌগাছার গাছিরা বর্তমানে খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহ এবং রস হতে গুড় তৈরীতে ব্যস্ত। শীতের শুরু থেকেই চলছে রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরীর কাজ। তবে এবছর রস, গুড় ও পাটালির দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন তাই নিন্ম আয়ের মানুষেরা এখনও গুড়ের স্বাদ নিতে পারেনি। বাজারের সব কিছুরই দাম বেড়েছে তাই গাছিরা রস গুড়ের দাম বৃদ্ধি করেছেন বলে জানা গেছে।
প্রতি বছর শীত এলেই গ্রামের প্রতিটি পরিবার রস গুড় দিয়ে হরেক রকমের পিঠা পায়েস তৈরীতে মেতে উঠেন। চলতি বছরেও গ্রামের মানুষের মাঝে এ ধরনের খাবার তৈরীর কোন ঘাটতি নেই কিন্তু রস গুড়ের যে দাম তাতে করে অনেকেই পিঠা পায়েস তৈরী থেকে বিরত আছেন। অন্য যে কোন বছরের তুলনায় চলতি শীতে খেজুরের গুড়ের দাম দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। এরফলে শীতের মাঝামাঝি সময়ে এসেও সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষ রস গুড়ের স্বাদ নিতে পারেনি।
গতকাল উপজেলার তারনিবাস, বেলেমাঠ, বাঘারদাড়ি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, খুব অল্প সংখ্যক পরিবারে রস হতে গুড় তৈরী করছেন। অথচ এক সময় গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই শীতের রস গুড় তৈরী হতো। বর্তমানে বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ তাই গুড় তৈরী আশংকাজনক ভাবে কমেছে।
বাঘারদাড়ি গ্রামের সফল গাছি লিয়াকত আলী। প্রতি বছর শীতে এই গাছি নিজের ও অন্যের খেজুর গাছ লিজ (ভাগে) নিয়ে রস সংগ্রহ করেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। চলতি শীতে তিনি শতাধিক খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করেছেন।
বর্তমানে প্রতিদিন ৭/৮ কেজি গুড় তৈরী করছেন। সোমবার সকালে এই গাছির বাড়িতে যেয়ে দেখা গেছে তার সহধর্মীনি রস হতে গুড় তৈরীতে ব্যস্ত। এসময় তিনি বলেন, দাম বেড়েছে জ্বালানি থেকে শুরু করে ঠিলে, তাবাল, দড়ি, দা কাচির। ফলে বাধ্য হয়ে রস ও গুড়ের দাম তারা বৃদ্ধি করেছেন।
মৌসুমের শুরুতে ১ কেজি গুড় ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে কিছুটা কমে ৩শ হতে সাড়ে ৩শ টাকায় কেজি বিক্রি করছেন। গুড়ের ব্যাপক চাহিদা উল্লেখ করে গাছি লিয়াকত আলী বলেন, রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত তার তৈরী গুড় বিক্রি হয়।
আর স্থানীয় ভাবে তো বিক্রি আছে। এখনও পর্যন্ত প্রতিদিন সিরিয়াল ধরে গুড় বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলার মাশিলা, কাবিলপুর, ধুলিয়ানী, পাতিবলিা, নিয়ামতপুর, মাড়–য়া, আড়পাড়া, সৈয়দপুর,কোটালিপুরসহ বেশ কিছু গ্রামে খোজ নিয়ে জানা গেছে প্রতিটি গ্রামেই গাছিরা চলতি শীতে দ্বিগুন দামে রস গুড় বিক্রি করছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিনয় কুমার, মশলেম উদ্দিন, সুমন হোসেন, ভ্যান চালক আব্দুর রশিদ বলেন, সাদ আছে কিন্তু সাধ্য নেই, যার কারনে এবছর শীতে এখনও রস গুড়ের কেমন স্বদ তা গ্রহন করতে পারেনি।
রসের তৈরী খির খেতে কতোনাই সুস্বাদু মনে করলে জিব্বায় জল চলে আসে কিন্তু এক ঠিলে রসের দাম ২০০ টাকা। টাকার কথা ভেবে সব ভুলে যায়। যদি কখনও দাম কমে তখন মনের ইচ্ছাটা পুরোন করবো। সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তদারকির অভাবে মনগড়া অজুহাতে গাছি ও গুড় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত দাম হাকিয়ে রস গুড় বিক্রি করছেন।