১৯৪০ সালে স্থানীয়রা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রর জন্য এক একর ৮৭ শতাংশ জমি দান করেন। সেই ৪০ সাল থেকেই সেই জমির অধিকাংশ বেদখলে ছিল। মাত্র কয়েক শতাংশ জমির উপর বর্তমান ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র অবস্থিত। অন্য জমির উপর দিয়ে পাকা রাস্তা, মসজিদ, কাঁচা বাজারের নামে দখল করে রেখেছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এমনকি নিজেদের নামে রেকর্ডও করে নেন তাঁরা। দীর্ঘ ৮১ বছর পর শনিবার সেই জমি উদ্ধার করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই জমি উদ্ধার করে কংক্রিটের খুঁটিতে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দখলে নিয়েছে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর আগে সকাল থেকেই জমিটি মেপে বুঝ করে দেন উপজেলা ভূমি অফিসের প্রতিনিধি হয়ে পাশাপোল ইউনিয়ন নায়েব, ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আব্দুর রহিমসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অবাইদুল ইসলাম সবুজের নেতৃত্বে স্থানীয় গন্যমান্যরা ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহারের সাথে ছিলেন যশোর সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ, পাশাপোল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন, উপ-সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের উপজেলা সম্পাদক মুক্তার হোসেন, হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার তৌহিদুল ইসলামসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
পাশাপোল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউিনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন বলেন, ১৯৪০ সালে স্থানীয়রা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য এক একর ৮৭ শতাংশ জমি দান করেন। তখন থেকেই কয়েক শতক জমি ছাড়া অন্য জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। পরবর্তীতে ৫/৭ শতক জমিতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের টিনশেড ঘর নির্মিত হয়। বে-দখলকৃত জমিতে স্থানীয়রা দোকান, পাকা রাস্তা, মসজিদ ও কাঁচাবাজার (সবজি দোকান) বসিয়ে দখলে রেখেছিলেন। পরে ১৯৯৪ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ বে-খলকৃত জমি উদ্ধারে মামলা করে। সেই মামলায় ১৯৯৬ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে রায়দেন নি¤œ আদালত। পরে দখলদাররা আপীল করলে ১৯৯৮ সালে আদালত তাদের আপীল খারিজ করে দেন।
তবে মামলার রায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে গেলেও ইতিপূর্বের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অনীহায় বে-দখলকৃত জমি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দখলে আসেনি। ২০২১ সালের শুরুর দিকে বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জমিটি দখলে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। সে অনুযায়ী শনিবার এই জমি মেপে বুঝে নিয়ে তাঁরকাটা দিয়ে ঘিরে নেয়া হলো।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ লুৎফুন্নাহার বলেন, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি দীর্ঘদিন বেদখলে ছিল। সেখানে বাজার বসতো। এমনকি ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নারী চিকিৎসক ও নার্সদের সেসব বাজারের মানুষ নানাভাবে উত্যাক্তও করতেন বলে সেখানে কোন চিকিৎসক অফিস করতে চাইতেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সহযোগীতায় জমি দখলে নিয়ে তাঁর কাটার বেড়া দেয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/কেএম