যশোরের অভয়নগরে ১০৭টি চুল্লিতে ফলজ ও বনজ গাছ পুড়িয়ে অবৈধভাবে কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। যে কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছে এলাকার শিশুরা ও বৃদ্ধারা। মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে উপজেলাবাসী।
জানা গেছে, নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছপালা। অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব গাছ কেটে তা পুড়িয়ে উৎপাদন করছেন কয়লা। বানানো হচ্ছে ১০৭টি চুল্লিতে কয়লা। এসব চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল, বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ, বন্যপ্রাণী ও পাখি। সেই সঙ্গে হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য, কমে যাচ্ছে জমির র্উবরতা। বছরের পর বছর পরিবেশ বিধ্বংসী এমন কাজ চললেও ব্যবস্থা নেওয়া হলেও থামছে না এমন অবৈধ কাজ।
উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের আমতলা ও সোনাতলা এলাকা ঘুরে একাধিক ব্যবসায়ী ও চুল্লি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দিকে ৫/৬ বছর যাবত গুটি কয়েক ব্যক্তি কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি ও বিক্রি করে আসছিল। ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে একাধিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সিদ্দিপাশা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। আমতলা ও সোনাতলা এলাকার গাছ কাটাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেও গাছ কাটা শুরু করেছে তারা। অথচ সেখানে রয়েছে শত শত পরিবারের বসতি। ঘন ঘন বাড়িঘর থাকা সত্ত্বেও বসতি বাড়ির পাশে গাছপালা কেটে পোড়ানো হচ্ছে। এসব চুল্লিতে বছরের পর বছর পোড়ানো হচ্ছে বাগানের গাছ। ফলজ ,বনজ গাছ কেটে জ্বালানি পুড়িয়ে চুল্লি তৈরি করে অবৈধভাবে কয়লা উৎপাদন করে যাচ্ছে দেদারচ্ছে।
কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দারা হানিফ সরদার, শাহিন শেখ, হারুন শেখ, ইউসুফ শেখ, আরিফ সরদার, নাজিম মোল্যা, হিমায়েত শেখ, মিজান সরদার, জাকির মোল্যা, সুখেন ভদ্র, খবির ফারাজী সঞ্জয় দাস, গোবিন্দ দাস, সবুজ সরদার, শরিফুল শেখ ও খবির ফারাজীর সাথে। তারা বলেন, এ অঞ্চলে ১০৭টি চুল্লি তৈরি করে কয়লা বানিয়ে আসছেন। কিন্তু তারা এতটাই দূর্র্ধষ যে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদতো দূরের কথা মুখ খুলতেও সাহস করেনা। মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ পোঁড়ানো হচ্ছে।
ঘনবসতিপূর্ন এলাকা এখানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, দাতব্য চিৎিসালয়,পানবরজ ও ক্ষেতখামার রয়েছে। এলাকায় ফলজ, বনজ গাছ কেটে পুড়িয়ে অবৈধভাবে কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে ১০৭টি চুলা তৈরি করে। এতে এ এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।
তারা আরো বলেন, এই কাজটি করে যাচ্ছে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ট্রলিতে করে কাট নিয়ে শতাধিক মাটির কাঁচা চুল্লি তৈরি করে কয়লা বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করা হচ্ছে। গাছপালা কেটে ছোট ছোট কাটের টুকরা বানিয়ে চুল্লির মধ্যে দিয়ে জ্বালানো হচ্ছে দেখা গেছে। এক পাশ দিয়ে ছোট কয়লা বের করা হচ্ছে। অন্যপাশে সেই কয়লা শুকানো হচ্ছে। বাকি জায়গায় বস্তাই ভর্তি করে রাখা হয়েছে। চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে চুল্লির খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭ থেকে ১০ দিন পোঁড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ পোঁড়ানো হয়। কাঠ পুঁড়ে কয়লা হয়ে গেলে সেগুলো বের করে ঠান্ডা করে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানায়, এ এলাকায় অনেক গাছপালা ছিল। বর্তমানে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কাঠ যখন পুড়ানো হয় তখন বিষাক্ত কালো ধুয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে দেখা দিচ্ছে। সরকারি নিয়মনীতিকে না মেনে এসকল ব্যক্তি প্রতিনিয়ত কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে আসছে। উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দুইবার অভিযান চালিয়ে চুল্লিগুলো গুড়িয়ে দিলেও বন্ধ হয়নি এ অবৈধ ব্যবসা। প্রতিবারই আরও নতুন নতুন চুল্লি তৈরি হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, উজাড় হচ্ছে গাছপালা। অপরদিকে স্থানীয়রা শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে ভুগছে। এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের উপর নানা হুমকি ধামকি নেমে আসে । সেই সাথে এই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পোহাতে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা।
এর আগে অনেকবার এলাকাবাসীরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন। কতিপয় ব্যক্তি জোটবদ্ধ হয়ে অবৈধভাবে মাটির চুল্লি বানিয়ে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে আসছে। এমনকি সরকারি দাতব্য চিকিৎসালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকাতেও তারা এ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লা তৈরির চুল্লি নির্মাণ করেছে উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অবাধে চুল্লিতে এ কয়লা তৈরি হওয়ায় নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) থান্দার কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি জেনেছি। কয়েক মাস আগে ওই অবৈধ কয়লা উৎপাদন চুলা ড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এর আগে ১০৪টি অবৈধ চুল্লি স্কেমিটার দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছিলাম। এবার তদন্তপূর্বক স্থায়ীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এমএম