খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত : রয়টার্স; জীবিত কারও সন্ধান মেলেনি : রেড ক্রিসেন্ট

চিফ অফিসারের অডিও বার্তা, জাহাজের খাবার পানি ফুরিয়ে আসছে

গেজেট ডেস্ক

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদুস্যর হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ থেকে গোপনে জাহাজ মালিকের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান। ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তায় জলদস্যুদের কবলে পড়ার সম্পূর্ণ ঘটনাটি বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছেন জাহাজ ও তাদের বর্তমান পরিস্থিতিও।

আতিকুল্লাহ খান তার অডিও বার্তায় জানান, জাহাজটিতে খাবার পানির পরিমাণ কম। আবার জাহাজে যেসব কার্গো রয়েছে সেগুলোও বিপজ্জনক। রয়েছে অগ্নিঝুঁকিও। সোমালিয়ান জলদস্যুরা জাহাজে ওঠার পর কার সঙ্গে কী আচরণ করেছে তাও বর্ণনা করেছেন তিনি।

তার অডিও বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘আসসালামুলাইকুম স্যার, আমি চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান বলছি।

আজকে সকালে জাহাজের সময় আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় একটা হাইস্পিড বোট আমাদের দিকে আসছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা এলার্ম দিয়ে ব্রিজে গেলাম। ওখান থেকে পরে সিটে চলে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার ও সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিল। আমরা ঝিকঝাক কোর্স করলাম। তারপর এএসএস-এ করলাম। ইউকে এমটিকেও ট্রাই করলাম। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যুরা চলে আসলো।

চলে আসার পর ওরা ক্যাপ্টন স্যার ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই আসলাম। আমাদের ডেকে কিছু গোলাগুলি করল। আমরা একটু ভয় পেয়েছি। সবাই ব্রিজে বসে ছিলাম। কারো গায়ে হাত তোলেনি। শুধু সেকেন্ড অফিসারকে একটু মারধর করেছে। তারপর ওরা আরেকটি স্পিডবোটে করে আরও কয়েকজন চলে আসল। এভাবে মুহূর্তেই প্রায় ১৫-২০ জন চলে আসে।

এর কিছুক্ষণ পরে একটি বড় ইরানিয়ান ফিশিং বোট নিয়ে আরও জলদস্যু চলে আসে। ইরানিয়ান ওই ফিশিং বোটটি এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। এটি দিয়ে তারা এক মাস ধরে নতুন কোনো জাহাজ জিম্মি করার জন্য সাগরে ঘোরাঘুরি করছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সামনে পড়ে গেলাম।

এই ফিশিং বোটের তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের জাহাজে থাকা পাম্প দিয়ে কিছু ডিজেল নিয়ে ওই বোটে দিয়েছে তারা। তেল দেওয়ার পর আমাদের জাহাজে উঠে জিম্মি করা ফিশিং বোটটিকে ছেড়ে দেয়।

তারপর ওরা আমাদের সেকেন্ড ও থার্ড অফিসারকে নিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে যায়। তাদের নিয়ে গিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছি। ওরা খুব ভয় দেখাচ্ছে।

আমাদের জাহাজে ২০-২৫ দিনের খাবার পানি আছে। প্রায় ২০০ মেট্রিক টনের মতো। সবাইকে বলেছি, এগুলো একটু সাবধানে ব্যবহার করতে। শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব আমরা। তবে, একটা সমস্যা হচ্ছে আমাদের জাহাজে কিছু কোল্ড কার্গো আছে। প্রায় ৫৫ হাজার টন। এগুলো একটু ডেঞ্জারাসও। ফায়ারেরও ঝুঁকি আছে। মিথেন বাড়ে। লাস্ট যখন অক্সিজেন মেপেছি তখন ৯-১০ শতাংশ লেভেল পেয়েছি। এটি নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। কোনো কারণে অক্সিজেন লেভেল বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হবে। এটার একটু ব্যবস্থা করবেন, স্যার।

আমাদের জন্য দোয়া করবেন, স্যার। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন, স্যার। সান্ত্বনা জানাবেন, স্যার। আসসালামুলাইকুম।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!