বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের তদারকির দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) দেওয়ার ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছে খুলনার চিকিৎসকেরা। তাঁরা অবিলম্বে ওই ঘোষণা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন চিকিৎসকেরা।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে চিকিৎসক নেতারা এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকির দায়িত্ব ডিসিদের ওপর দেওয়ার ঘোষণা দেন। একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষের এমন ঘোষণা চিকিৎসকেরা ব্যথিত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মলনে চিকিৎসক নেতারা বলেন, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাত সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি ব্যাপার। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটা জানতে ও বুঝতে পারবেন। যাঁদের এ ব্যাপারে ধারণা নেই,তারা কীভাবে ওই খাতের তদারক করবেন। এটি সম্পূর্ণ হঠকারী সিদ্ধান্ত। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএমএ খুলনার সভাপতি শেখ বাহারুল আলম।
তিনি বলেন, ডিসি সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে চিকিৎসকদের মর্যাদা লুণ্ঠিত হয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানগুলো তদারকির জন্য উপজেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জেলায় সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পর্যায়ে পরিচালক এবং সবার ওপরে আছেন মহাপরিচালক ও তাঁর দপ্তরের পরিচালকেরা। উপযুক্ত তদারক কর্তৃপক্ষ থাকা সত্ত্বেও অপেশাদার, ঔপনিবেশিক ভাবধারার আমলা দিয়ে অতিরিক্ত তদারক করা হলে দ্বৈত তদারকির ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আমলাতন্ত্রের পূর্বনির্ধারিত ষড়যন্ত্রের অংশ। আমলাদের একটি কুচক্রী মহল স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে তৃণমূলে প্রশাসনিক ক্যাডার ও চিকিৎসকদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করা হলে চিকিৎসকরা তা মেনে নেবেন না এবং যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার স্বার্থে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন চিকিৎসকেরা। দাবিগুলো হচ্ছে- স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান তদারকির দায়িত্ব ডিসিদের ওপর হস্তান্তরের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় জনবল, অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও ওষুধের সংকট নিরসন করতে হবে; পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য রোধ করতে হবে; চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে; চিকিৎসা দিতে গিয়ে কোনো মৃত্যু ঘটলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাষ্ট্রের কাছে দায়মুক্তি ভোগ করার যে আইন আছে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য দাবিগুলো হলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজনের তাগিদে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা সহজ ও সুগম করতে হবে; সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা অর্জনে আমলাদের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে; পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ট্রেইনি চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক হাসপাতালে থাকতে হয়, তাঁদের আবাসনব্যবস্থা ও অতিরিক্ত সময়ের জন্য ভাতা দিতে হবে; ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের আবাসনের ব্যবস্থা ও নবম গ্রেডের সমপরিমাণ সুবিধা দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক নেতারা বলেন, চিকিৎসকেরা রোগীদের যথাযথ সেবা দিতে দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জনবল, অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের সংকট নিরসনের দাবি জানিয়ে আসছেন। পাশাপাশি পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও আন্তক্যাডার বৈষম্য রোধের দাবিও বিভিন্ন সময় তুলে ধরেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় দাবি পূরণে সব সময় উদাসীন। এতে অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী নেওয়াজ, সহসভাপতি এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ, মোল্লা হারুন অর রশিদ ও শামসুল আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন রায় প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এম এম