দাম সমন্বয়ের নামে গত চার মাসে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন চার দফায় এলপি গ্যাসের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। ফলে জ্বালানী খাতে খরচ মেটাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তের।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দেশে সর্বপ্রথম ৯৭৫ টাকায় এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করে এ বছরের ১২ এপ্রিল। মে মাসে গ্যাসের দাম কমিয়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার ৯০৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী জুন মাসে গিয়ে ৮৪২ টাকায় নির্ধারণ করলেও বাস্তবে বাজারে তার কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি। ঐ সময়ে প্রায় হাজার টাকা দরে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে।
এরপর ৩০ জুন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ৮৪২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৯১ টাকা নির্ধারণ করে ১২ কেজির সিলিন্ডার। পর্যায়ক্রমে আগস্ট মাসে ৯৯৩ টাকা এবং সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমদিকে ১,০৩৩ টাকা দর নির্ধারণ করলেও নির্ধারিত এ মূল্যেও গ্যাস কোথাও বিক্রি হয়নি। তখন ১২ শ থেকে সাড়ে ১২ শ টাকায় গ্যাস কিনতে হয়েছে ব্যবহারকারীদের। এরপর সর্বশেষ ১০ অক্টোবর কমিশন ১,২৫৯ টাকা নির্ধারণ করেছে। যদিও সরকারি সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি’র দর ৫৯১ টাকা রয়েছে।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বেঁধে দেওয়া দরে গ্যাস বিক্রির বিষয়ে নগরীর পশ্চিম বানিয়াখামারের ব্যবসায়ী মোঃ জিয়াউস সাদাত বলেন, কমিশনের রেটের ওপর তাদের গ্যাস বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ তারা কোম্পানীর নিকট থেকে গ্যাস নেয়। কোম্পানীর নির্ধারিত দরের ওপর লাভ রেখে তাকে খুচরায় গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কমিশন দাম বাড়িযে রেট বেঁধে দিলেও তার থেকেও এবার গ্যাস আরও বেশী দরে বিক্রি হবে বলে তিনি খুলনা গেজেটকে জানিয়েছেন।
দোলখোলা ইসলামপুর জামে মসজিদ মোড়ের আনিস গ্যাস হাউসের মালিক মোঃ আনিস বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়লে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তা কমাতে পারবে? কোন দিন সম্ভব নয়। গত মাসের শেষের দিকে কমিশন একটা রেট দিয়ে আবার এ মাসের ১০ তারিখে আবার নতুন করে রেট দিয়েছে। তাদের এ রেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বাস্তাবায়ন করতে হলে আগে গ্যাসের দরের সমন্বয় করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
শান্তিধাম মোড়ের বাসিন্দা বিপ্লব কুমার সাহা খুলনার একটি সরকরি ব্যাংকের কর্মকর্তা। সারামাসে তিনি যা বেতন পান তা ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খান। তিনি বলেন, ‘রেগুলেটরি কমিশন গত চার মাসে এলপিজি গ্যাসের যে দাম নির্ধারণ করেছে সে দামে কোথাও বিক্রি হয়নি। তার থেকে একশ’ টাকা বেশী দরে দোকানদারা বিক্রি করেছেন। এগুলো দেখার কেউ নেই। সরকারের বাজার মনিটর করার জন্য একটি সংস্থা রয়েছে। সেগুলোর কাজ বাজার দর দেখা। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন বলে মনে হয় না।’
নগরীর মডার্ণ ফার্নিচার মোড়ে সাবিনা আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গ্যাসের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্যাস ব্যবহার ছেড়ে দিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম একবার বেড়ে গেলে আর সহজে কমতে চায় না। গত চার মাসে গ্যাসের দাম পর্যায়ক্রমে ৪ শ টাকার বেশি বেড়েছে। কিন্তু আমাদের আয় সেভাবে বাড়েনি। আয়ের সাথে ব্যায়ের একটা সংগতি থাকা উচিত, না হলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই