খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেয়ার আহবান বিএনপির: মির্জা ফখরুল
  চলমান ইস্যুতে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার: প্রেস সচিব
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৮

চলছে হরহামেশা পাখি শিকার, বক অবমুক্ত (ভি‌ডিও)

একরামুল হোসেন লিপু, দিঘলিয়া

৪টি ধবধবে সাদা ধলি বক। একটা ব্যাগের ভীতর বদ্ধ ছিলো দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা যাবৎ। অবুঝ বকগুলো কথা বলতে পারে না। হয়তো ব্যাগের ভীতর দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলো তারা। ধলি বক ৪ টি স্ব ইচ্ছাই ব্যাগের ভীতর ঢুকে নাই। তেরখাদা উপজেলার কোন এক বিল থেকে নওয়াব আলী নামে জনৈক এক অবৈধ পাখি শিকারী বকগুলো ধরে বিক্রির উদ্দেশ্যে ব্যাগের ভীতর ঢুকায়।

আতাই নদী পার হয়ে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী ইউনিয়নের বাসৈরমার খেয়াঘাটে বিক্রির সময় পরিবেশবাদী সংগঠন আলোর মিছিলের এক স্বেচ্ছাসেবী সদস্য রাসেল কবিরের দৃষ্টিগোচর হয়। রাসেল কবির এলাকাবাসীর সহায়তায় অবৈধ পাখি শিকারী নওয়াব আলীকে পাখিসহ ধরে খুলনা বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট (WCCU) কে অবহিত করে। অপরাধ দমন ইউনিট এ সময় তেরখাদা উপজেলার ভূতিয়ারবিলে অবৈধ পাখি শিকারীদের ধরতে অভিযানে থাকায় তারা বক ৪ টিসহ পাখি শিকারীকে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহবুবুল আলম বিষয়টি অবহিত হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ পাখি শিকারীকে দুই হাজার টাকা অর্থদন্ড জরিমানা করেন। পরে ধলি বক ৪ টিকে উপজেলা পুকুরপাড়ে নিয়ে অবমুক্ত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলোর মিছিলের প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক শেখ তারেক, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম রাজিব, সদস্য রাসেল কবির প্রমুখ।

পাখি শিকার দন্ডনীয় অপরাধ। দেশে এ সংক্রান্ত আইন রয়েছে। তারপরও শত শত অবৈধ পাখি শিকারী নওয়াব আলীর মতো হরহামেশা পাখি শিকার করে যাচ্ছে।

প্রাণীকুল প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ এবং সম্পদও বটে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যই আমাদের বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে হবে। কারণ প্রকৃতি না বাঁচলে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে না। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্যা কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর উদ্যোগে জাতিসংঘের ৮০টি সদস্য দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কনজারভেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেনজারড স্পেসিস অব ওয়াইল্ড ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা (সিআইটিইএস) সনদ অনুমোদিত হয়। এই সনদে ৩৪ হাজার প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ৩ মার্চকে ‘বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো বন্যপ্রাণী সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য বিশ্ববাসীকে সোচ্চার করে তোলা। সেই থেকে জাতিসংঘ প্রতিবছর বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উদযাপন করে আসছে।

সারা বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচার, বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা, বন ও বনভূমি হ্রাস এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশে একসময় প্রচুর বন্যপ্রাণী ছিল। আমাদের অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে গত কয়েক দশকের ব্যবধানে আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বেশ কয়েক প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এদের মধ্যে আছে একশিঙ্গা গণ্ডার, বারশিঙ্গা, প্যারা হরিণ, রাজশকুন, বাদিহাঁস, গোলাপি শিরহাঁস, ময়ূর, মিঠাপানির কুমির, হকস্ বিলড্ টারটেল ইত্যাদি।

১৯৭৩ সালের বন্যপ্রাণী আইনকে সংশোধন করে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন -২০১২’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী আইনে দণ্ড ও শাস্তির বিধান বাড়ানো হয়েছে।

অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী পাচার ও নিধন বন্ধের লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে ঢাকায় এবং সকল বিভাগীয় শহরে ‘বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও থেমে নেই বন্যপ্রাণী পাচার ও নিধন।

পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠন আলোর মিছিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সেক তারেক খুলনা গেজেট কে বলেন, বন্যপ্রাণী পাচারও নিধন বন্ধে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে আরো সক্রিয় হতে হবে।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!