খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ পৌষ, ১৪৩১ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৪
  বগুড়ায় ট্রাকচাপায় বাবা-মেয়েসহ নিহত ৩
  আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে : আসিফ নজরুল

চরমোনাই পীরের ১৫ দফা দাবি পেশ, ৩ মাসের কর্মসূচি ঘোষণা

গেজেট ডেস্ক

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১ তম বর্ষে এসেও আজকের সরকার ৭১ পুর্ববর্তী সরকারের মতো, নিপিড়নমূলক আচরণ করছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোন অধিকার ও সম্মান নেই। সকল অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। অথচ স্বাধীনতা উত্তর দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, স্বাধীন দেশে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাবে, সম্মান পাবে। বাক স্বাধীনতা পাবে, ন্যায়বিচার পাবে। জান-মাল, ইজ্জত-আবরু এবং জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। অর্থনৈতিক সাম্য ও রুটি রুজির নিশ্চয়তা পাবে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পাবে।

তিনি বলেন, জনগণের সকল মৌলিক অধিকার আজ হরণ করা হয়েছে। জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করেছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং সুদ ও ঘুষকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শাসক শ্রেণীর এহেন কর্মকান্ডের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। জনতাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি দেশে একধরণের দুর্ভিক্ষ জন্ম দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে যাচ্ছে। খাবারের জন্য খাদ্য ট্রাকের পেছনে মানুষ দৌড়াচ্ছে। জাতীকে নেশাগ্রস্থ করে স্বার্থ হাসিলের পায়তারা চলছে। দেশ আর এভাবে চলতে পারে না।

আজ শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তান শহিদ মতিউর রহমান পার্কে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম,মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, মহাসচিব, হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহম্মেদ,জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি হযরত মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, উপদেষ্টা মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ, ডা. মুহাম্মদ আক্কাস আলী সরকার, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন সভাপতি মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, যুগ্ন মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সিনিয়র নেতা আতিকুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কে এম আতিকুর রহমান, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ সেক্রেটারী জেনারেল বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাশেম, ইসলামী যুব আন্দোলন সেক্রেটারী জেনারেল আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল করীম আকরাম। মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, শিক্ষা ও সংষ্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন, ইসলামী যুব আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, ইসলামী আইনজীবী পরিষদ ও ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ-এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

বাদ জুমু’আ এই মহাসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টার ভিতরে গুলিস্তান এলাকা লোকে লোকারন্য হয়ে সমাবেশ স্থলে তিল ধারণের ঠাই ছিল না। বেলা ১১টায় জাতীয় মহাসমাবেশ শুরু হয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর ও সমাবেশের সভাপতি মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই-এর খুৎবা দান ও ইমামতিতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জুমু’আর অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের কারণে পুরো গুলিস্তান, নবাবপুর, পল্টন মোড় ও রাজুক ভবন এলাকা যানশূণ্য হয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়।

মহাসমাবেশে ঘোষিত ১৫ দফা দাবি :

১. যেকোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজীর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ২. দেশে মদ ও সকল ধরণের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩. শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে। ৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে ৫. শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিকক্যবাদী সকল ধর্মবিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপঁচা ডারউইনের থিউরী বাদ দিতে হবে। কারান্তরীণ সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে ৬. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে ৮. সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। ৯. তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে ১০.নির্বাচনে সকল দলের জন্যে সমান সুযোগ তৈরী করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারী বেসরকারী গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের হয়রানী বন্ধ করতে হবে ১১. দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। ১২. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে ১৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (চ.জ) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে ১৪. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে ১৫.সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচী ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।

কর্মসূচি :

বিভাগীয় সমাবেশ : ১৩ মে, শুক্রবার রংপুর, ২০ মে, শুক্রবার বরিশাল, ২১ মে, শনিবার খুলনা, ২৭ মে, শুক্রবার চট্টগ্রাম, ৪ জুন, শনিবার রাজশাহী, ১০ জুন, শুক্রবার সিলেট, ২০ জুন, সোমবার মোমেনশাহী ও ১ জুলাই, শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই দাম বাড়ে বলে মন্ত্রণালায়ের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে। সরকারীদলের সমর্থনপুষ্ট মধ্যস্বত্বভোগীরা স্তরে স্তরে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করে। পথে-ঘাটে পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানরা চাঁদাবাজি করে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী করার ক্ষেত্রে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের কারসাজী করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। সরকারের ভুল মুদ্রানীতি, শুল্কনীতি, আমদানী সিদ্ধান্তে অপরিনামদর্শিতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। যেকোন মূল্যে খাদ্যদ্রব্যের দাম সহনীয় করার দাবি জানান।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!