খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে বক্তারা

‘ঘূণিঝড় রেমালে প্রকৃত ক্ষতি সরকারি হিসেবের চেয়েও কয়েকগুন বেশি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

মৃতের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে দুর্যোগের ভয়াবহতা নিরূপণ করা যায় না। দুর্যোগ পরিবেশের যে ক্ষতি করেছে সেটি আমাদের অগচোরে রয়ে গেছে। গত ৩০ বছরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলের সেইসব এলাকার মানুষ যেখানে সময়মত সংকেত পৌছানো যায়নি। ফলে উপকূলে বসবাস করতে হলে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। তাই উপকূলের মানুষগুলো লড়াই করে বাঁচতে চায়। সেজন্য তাদের উপযুক্ত সহায়তা দরকার।

দেশের দক্ষিন-পশ্চিত উপকূল সুরক্ষায় শুধুমাত্র টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে হবে না, রি-সেটেলমেন্ট প্লান্ট বাস্তায়ন করতে হবে। সরকারের একটি বাড়ি একটি খামারের মতো করে ‘একটি বাড়ি, একটি শেল্টার’ প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দেশের উপকূল অরক্ষিত রয়েছে। তাই উপকূল সুরক্ষায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে তাদের চাহিদা অনুযায়ি পরিকল্পনা মাফিক বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।

ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্গত উপকূলের বর্তমান পরিস্থিতি সরজমিনে পরিদর্শন শেষে শনিবার (২২জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে এই দাবি জানান, বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এর নেতৃত্বাধীন নাগরিক এবং সাংবাদিক প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এবং সাতক্ষীরা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

উপকূলের মানুষের জন্য আসন্ন বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তারা আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ও প্রবল জলোচ্ছাসে দক্ষিণ-পশ্চিম (সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট) উপকূলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বসতবাড়ি ও জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। একই সাথে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে তারা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।

‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্গত উপকূলের বর্তমান পরিস্থিতি সরজমিনে পরিদর্শন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আলোচনায় অংশ নেন, বিশিষ্ট গনমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রসুল বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক মীর মোহাম্মদ আলী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান আবুহেনা মোস্তফা কামাল, কুয়েট এর সহকারি অধ্যাপক আমিনুল হক ভুইয়া, লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, চ্যানেল আইয়ের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জি‘, নিউএইজ ও সময়ের খবরের নিজস্ব প্রতিবেদক রুহুল কুদ্দুস, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান, সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার মমতাজ আহমেদ বাপি, দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান, দৈনিক দক্ষিণের মশালের অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সুন্দরবন উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বযক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, জলবায়ু অধিক পরামর্শ ফোরামের আহ্বায়ক প্রফেসর আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মো. মোজাফ্ফর রহমান, ডিবিসি নিউজ এর জেলা প্রতিনিধি এম বেলাল হোসাইন, দৈনিক সংযোগ প্রতিদিনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি অসীম বরন চক্রবর্তী প্রমুখ।

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা। সরজমিনে ২০ জুন এবং ২১ জুন সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে যে ঐখানের মানুষ বিশেষত নারীরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে । সেখানে বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মৎস্য ঘের, ফসল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনে পশুপাখির মৃত্যুসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ত্রাণ ও পূনর্বাসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। দুর্যোগ পরবর্তী পূনর্বাসন কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

উপকূলীয় এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বক্তারা আরো বলেন, ঘূণিঝড় রেমালে প্রকৃত ক্ষতি সরকারি হিসেবের চেয়েও কয়েকগুন বেশি। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ত্রাণের থেকে জরুরি লবণপানি নিয়ন্ত্রণ। লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কৃষিকাজ করেই উপকূলের মানুষ তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। দুর্যোগে সব থেকে বেশি দুর্ভোগের শিকার নারী ও শিশুরা। পূনর্বাসনে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুন্দরবনসহ পরিবেশ সুরক্ষায় নজর দিতে হবে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল ধীরে ধীরে আঘাত করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে তান্ডব চালিয়েছে। তাই মৃত্যু কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের পুনবার্সনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নদ-নদী ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উন্নয়ন কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত করতে হবে।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বেড়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ভৌগলিক অবস্থান, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দারিদ্রতা, দীর্ঘমেয়াদী লবণাক্ততা, সংকটাপন্ন কৃষি, প্রভৃতির কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ওই এলাকাকে বিশেষ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নতুন করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে, উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে , উপকূলের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্ধের পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। উপকূলে সুপেয় পানির টেকসই সমাধান করতে হবে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, নদীভাঙ্গন ও বাঁধের ভূমিক্ষয় ঠেকাতে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!