সাতক্ষীরায় গ্রাহকদের শতকোটি টাকা প্রতারণা করে স্বপরিবারে পালিয়ে যাওয়া প্রগতি সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক প্রাণনাথ দাস, চেয়ারম্যান ইতি রানী বিশ্বাস ও সম্পাদক বিশ্বনাথ দাসের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা হলেও ২৬ ঘণ্টায়ও মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।
এদিকে লাপাত্তা হওয়ার ১২ ঘণ্টা পার না হতেই বুধবার ভোর ৬টার দিকে কয়েকজন প্রগতি এন্টারপ্রাইজের মালিক প্রাণনাথ দাসের হস্তান্তরিত মধুমোল্লারডাঙি এলাকার গণেশ দাসের ছেলে অসীম দাস সোনার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শার্টারের তালা ভেঙে এক হাজার গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার দুটি ট্রাকে করে লুট করার ঘটনায় থানায় দায়ের করা অভিযোগটি রয়েছে তদন্তাধীন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেল গ্রামের ও বর্তমানে পুরাতন সাতক্ষীরার বাসিন্দা প্রাণনাথ দাস ২০০২ সালে রুপালী লাইফ ইনসিওরেন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জেলা ও জেলার বাইরে বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বহু টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে ২০১২ সালে ১২১ নং সমবায় রেজিষ্ট্রেশন মূলে প্রগতি সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি খোলেন প্রাণনাথ দাশ। সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বড় ভাই বিশ্বনাথ দাশকে নিযুক্ত করে গত ১০ বছরে ডিপিএস ও ফিক্সড ডিপোজিট এর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। সম্প্রতি তার স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করার খবর পেয়ে গ্রাহকরা মুনাফা ও আসল টাকা ফেরৎ চাইলে প্রাননাথ টালবাহানা শুরু করেন।
পরবর্তীতে এসব টাকা ফিরে পেতে তারা প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাদের শরনাপন্ন হয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভূধর সরকারসহ শতাধিক ব্যক্তি চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, র্যাব- ৬ ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে প্রাননাথ দাশ, তার ভাই বিশ্বনাথ দাশ ও স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস যাতে গ্রাহকদের বিপুল পরিমান টাকা বিদেশে পাঠিয়ে নিজেরা পালাতে না পারে সেজন্য তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার আবেদন করা হয়।
এরপর কতিপয় গ্রাহক টাকা পাওয়ার দাবিতে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রাণনাথের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ চলাকালে প্রাণনাথ দাশ অজ্ঞাত স্থানে থেকে আন্দোলনকারিদের হুমকি দেন। এই ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রাণনাথের স্ত্রী ও মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে জানা যায় যে, প্রাণনাথ তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে জনৈক মিলন মন্ডলের সহযোগতিায় শ্যামনগরের রমজাননগরের সীমান্ত দিয়ে কোলকাতার রাজারহাট এলাকার নিউটাউনের বাড়িতে চলে গেছেন।
এদিকে প্রাণনাথের স্বপরিবারে ভারতে চলে যাওয়ার খবরে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পক্ষ থেকে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। বিকাল চারটায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক অরুন কুমার কর্মকার বাদি হয়ে প্রাণনাথ, তার স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস ও বড় ভাই বিশ্বনাথ দাশ এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।
এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। রাতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মহিদুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। একইভাবে বৃহষ্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় তারা সদর থানায় এসে মামলা না হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম ঘটনার তদন্তে নামেন।
এদিকে মধুমোল্লারডাঙি এলাকার অসীম দাস সোনা জানান, তিনি প্রাণনাথ দাসের কাছ থেকে ১৫ দিন আগে তার প্রগতি এন্টারপ্রাইজ গ্যাস সিলিন্ডারের একটি লট কিনে নিয়ে সেখানে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। বুধবার ভোর ৬টার দিকে রাজারবাগান এলাকার ৮/১০ জন তার মালিকানাধীন প্রগতি এন্টারপ্রাইজের শার্টারের তালা ভেঙে দুটি ট্রাকে করে ১২ লাখ টাকা মূল্যের এক হাজার গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার লুট করে নিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি ঘর মালিক জাহিদ হোসেনের কাছ থেকে জানতে পারেন। খবর পেয়ে তিনি ও ম্যানেজার বেল্লাল হোসেন ঘটনাস্থলে এসে ট্রাক আটক করেন। তুহিন এ সময় ম্যানেজার বেল্লাল হোসেনের মোবাইল কেড়ে নেন। এ সময় তার কাছ থেকেও মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। পরে বেল্লাল হোসেনকে মোটর সাইকেলে তুলে শহরের পোষ্ট অফিস মোড়ে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় তুহিন। এ ঘটনায় তিনি বুধবার থানায় একটি অভিযোগ দিলেও বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে বৃহষ্পতিবার দুপুরে পুলিশ পরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলামকে ঘটনার তদন্তে পাঠানো হয়। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এমএম