খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৬ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  জাতীয় দাবা চলাকালীন অসুস্থ হয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের মৃত্যু
  ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে চালক-হেলপার নিহত

খুলনায় গুমের শিকারদের সন্ধান চেয়ে স্বজনদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি), যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেন এবং বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ব্যবসায়ি মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদারের সন্ধান চেয়েছেন তাদের স্বজনরা। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে সোমবার (৩০ আগষ্ট) দুপুরে খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী রোডস্থ জাতিসংঘ পার্কের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি এ দাবি জানান তারা।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ ও মানবাধিকার কর্মীদের ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক’ যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান এতে সভাপতিত্ব করেন।

মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালীন অনুষ্ঠিত সমাবেশে গুমের শিকার সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি)’র পিতা মো. আব্দুর রাশেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই হিমেলের নেতৃত্বে পুলিশ তার ছেলে জনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু থানায় কয়েকদিন রেখে তাকে গুম করা হয়। গত ৬ বছরেও তার সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। এমনকি মামলা করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ধর্ণা দিলেও কোন আইনজীবী পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতে রাজি হয়নি। যদিও কয়েকজন সাহসী আইনজীবীর মাধ্যমে সম্প্রতি আমি সাতক্ষীরা আদালতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। তিনি অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি এবং তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের বড় ভাই মো. রিপন হোসেন বলেন, তার ছোট ভাই মো. রেজোয়ান হোসেনকে ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট বেনাপোল থানা পুলিশ আটক করে। পরবর্তীতে ওসি অপূর্ব হাসানের নেতৃত্বে তাকে গুম করা হয়। এ ঘটনায় তারা ভয়ে মামলা করার সাহস পাননি। দীর্ঘ ৫ বছরেও তার ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা-বাবা অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন। ভাইয়ের সন্ধান দাবি করেন তিনি।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ব্যবসায়ি মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদারের ছেলে কলেজ ছাত্র মো. শাওন হাওলাদার বলেন, তার বাবাকে ২০১১ সালের ৬ জুলাই পুলিশ বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে আসে। তার পর থেকে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে তার কোন সন্ধান মেলেনি। এখন তারা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত। বাবা না থাকায় তাদের লেখাপড়া ও সংসারের খরচও বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তার মা অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন। তিনি তার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

কর্মসূচীতে বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ড. এ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, নিরাপদ সড়ক চাই- নিসচা’র খুলনা জেলা সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট শেখ মো. আলমগীর আশরাফ ও মানবাধিকার কর্মী শেখ আব্দুল হালিম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ও সাংবাদিক কেএম জিয়াউস সাদাত। উপস্থিত ছিলেন মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদারের স্ত্রী মাহমুদা বেগম, এ্যাডভোকেট মো. শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক এম এ আজিম, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. আলী বাবু, মো. নূর নবী, মো. হাবিবুর রহমান, মো. শওকত হোসেন, মো. সাকিব হাসান, মো. ইমরান হোসেন, মো. সাকিব মাহমুদ, মো. গালিব হাসান, মো. তামিম হাসান, শেখ হারুন-অর-রশীদ প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ জন পর্যন্ত দেশে ৬০৩ জন গুমের শিকার হয়েছেন। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রী-সন্তানরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম কষ্টে রয়েছেন। এতে দেশের সাধারণ নাগরিকরাও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সূত্র: প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!