মাহেন্দ্র চালক শেখ ওহিদুর রহমান রিপন হত্যার দায়ে খুলনায় চারজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক ছিল। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সকালে খুলনা অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম আশিকুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের বিষয়টি খুলনা গেজেটকে নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী শুভেন্দু রায় চৌধুরী।
তিনি জানান, আসামিদের মৃত্যুদন্ড ছাড়াও মামলা বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এর মধ্যে দস্যুতার অভিযোগে প্রত্যেকের ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড। এছাড়া লাশ গুমের অপরাধে প্রত্যেককে ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত আসামির হলো, কিশোরগঞ্জ জেলার ইলচ্চা বাজার সাদির চর গ্রামের ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ নুর ইসলাম, একই এলাকার হরিদাসের ছেলে জনি দাস, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার ফল সমস্যা বাজার এলাকার আব্দুর রউফ সিকদারের ছেলে মোঃ রনি শিকদার ও বটিয়াঘাটা উপজেলা আইয়ুব আলী মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ মাসুদ রানা মোল্লা।
ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাজী সাব্বির আহমেদ জানান, ওহিদুর রহমান রিপন একজন মাহেন্দ্র চালক। সে সাতক্ষীরা জেলার লাবশা এলাকার শেখ তৌহিদুর রহমানের ছেলে। ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি সকালে গাড়ি চালানোর উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে বাড়ি ফিরে না আসলে পরিবারের মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়ে। পরেরদিন নিহতের ছোটভাই জানতে পারে লবনচরা থানাধীন ডাঃ দিপু সাহেব নামে একব্যক্তির জমিতে একজন মাহেন্দ্র চালকের লাশ পাওয়া গেছে। সংবাদ পেয়ে নিহতের ভাই খুলনায় এসে তার লাশ শনাক্ত করেন।
লাশ দাফন শেষে তিনি জানতে পারেন, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থেকে মাহেন্দ্রসহ চারজন আটক হয়েছে। পরের দিন তিনি লবনচরা থানায় এসে চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
আইনজীবী সাব্বির আহমেদ ঘটনার বিবরণ দিয়ে আরও বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উল্লেখিত আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি মাহেন্দ্র ছিনতাইয়ের লক্ষে খুলনায় আসার জন্য সাত শত টাকা ভাড়ার চুক্তিতে রওনা হয়। রাত নয়টার দিকে নগরীর লবনচরা থানাধীন ডাঃ দিপু সাহেবের জমির নিকট পৌছালে আসামি মাসুদ ও রনি রশি দিয়ে ড্রাইভারের শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। শ্বাসরোধে তার মৃত্যু না হলে নুর ইসলাম রিপনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা লাশ ওইস্থানে ফেলে মাহেন্দ্রা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে গোপালগঞ্জ এলাকার কাশিয়ানি পুলিশের চেকপোষ্টে গিয়ে তারা আটক হয়। একপর্যায়ে তারা হত্যাকান্ডের কথা পুলিশের নিকট স্বীকার করে। উল্লেখিত আসামিরা হত্যাকন্ডে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর মামালার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক মীর আতাহার আলী চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলা চলাকালীন ১৫ জন স্বাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই