খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

খুলনায় বাহারি ভর্তা-ভাতের পান্থশালা

আজিজুর রহমান

সকাল বেলার নাস্তার সময় পেরিয়ে দুপুরে পেটের ভেতর ডুগডুগি বাজাচ্ছে ক্ষুধা বাহাদুর। ধারেকাছে কোনো খাবারের দোকান দেখছি না। খানিকটা ঘোরাঘুরি করলে যে মিলবে, সেই আভাসও নেই। কিন্তু খেতে তো হবে। তাই বাইপাস সড়ক ধরে শহরের দিকে এগিয়ে খাবারের সন্ধান।

সিটি বাইপাস সড়ক থেকে একটি মোড় ঘুরে বায়ে আড়ংঘাটার পিচঢালা সরু পথ। দুই পাশে সার বেঁধে দাঁড়ানো ছায়াবীথিতে ঢাকা। আঁকাবাঁকা সেই পথে চলতে চলতে খুলনা নগরীতে ঢুকে মিলে গেল একটা খাবারের হোটেল। টিনশেডের ছোট্ট ঘর। সামনে সাইনবোর্ডে লেখা- ‘হানিফ কাকার ভর্তার হোটেল’

ভেতরে চারটি টেবিল আর কয়েকটি বেঞ্চ ও চেয়ার। খাবারের খোঁজ নিতে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী আছে?’ উত্তর এল, ‘হাঁসের ভুনা, চিংড়ির দোপেঁয়াজা, খাসির মাংস।’ অমনি সরসর করে জিভে পানি চলে এল। কিন্তু খুবই ভোরে বাসা থেকে খালি পেটে সংবাদের সন্ধানে বের হওয়ার কারণে এ ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো। তাই আবার অনুসন্ধান, ‘আর কী আছে?’

হোটেলে থাকা নাঈম ইসলাম নামের ওই যুবক বলল, ‘২২ রকমের ভর্তা আছে।’ শুনেই জিভের পানি পড়েই যায়!

যুবক জানালেন, ‘আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ঢেড়স ভর্তা, কলা ভর্তা, শুকনা মরিচ ভর্তা, কুমড়া ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, ধুনিয়া পাতার ভর্তা, রসুন ভর্তা, বাদাম ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, টাকি ভর্তা, ছোট চিংড়ি ভর্তা, রুই মাছের ডিম ভর্তা। তবে সব ভর্তার নাম বলতে অনেক সময় লাগব।’

ফরমাশ দিতেই ছোট বাটিতে করে চলে এল বাহারি সব ভর্তা। এক চামচ করে ভর্তা নিয়ে শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া। ভর্তার সঙ্গে ছিল বাধাকপি ভাজি। ব্যস, আর যায় কোথা! গোগ্রাসে ভর্তা দিয়ে পেট পূজা চলল।

মুখরোচক ভর্তা দিয়ে দুই প্লেট ভাত খেয়ে আরও কিছু জানার ইচ্ছে জাগল মনে। তাই সোজা রান্নার ঘরে প্রবেশ। মালিক আবু হানিফের কাছে ভর্তার তালিকা চাইলে তিনি হাসিমুখে বললেন, ‘তালিকা তো করি নাই। বাজারে যেদিন যা পায় তাই দিয়ে ভর্তা করি।’

সকাল আটটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে হানিফ কাকার ভর্তার হোটেল-পান্থশালা। সকালের নাশতাও পাওয়া যায়, তবে সেটাও ভর্তা-ভাত। দুপুরের খাবারের আয়োজন শুরু হয় ১২টা থেকে। চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। আর দামেও সস্তা। শুধু ভর্তা-ভাত খেতে চাইলে একজনের ৪০ টাকায় হয়ে যাবে। হোটেলে বসে খাওয়া ছাড়াও প্যার্সেল করে ভর্তা নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

ভর্তার হোটেল দেওয়ার কারণ সম্পর্কে মালিক মো. আবু হানিফ হাওলাদার খুলনা গেজেটকে বললেন, ‘আমি অনেক হোটেলে কাজ করেছি। তখন দেখেছি মানুষ মাছ-মাংসের চেয়ে ভর্তা বেশি খেতে পছন্দ করে। ভর্তা দিয়ে খাবার খেতে ভালো লাগে। আবার খরচও কম। তাই আমি হোটেল দিছি। প্রতিদিন আধা মণ চাল রান্না করি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হোটেল খোলা থাকে। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা প্রতিদিন বেচাবিক্রি হয়। এই হোটেলের আয় দিয়ে আমার সংসার চলে।’

হানিফ জানান, তাঁর দোকানে বাসি-পচা খাবার নেই। সব মসলা হাতের বাটা। রান্না হয় মাটির চুলায়। রান্না করেন ঘরের বউ-ঝিয়েরা। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় খানাপিনা। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। দূর-দূরান্তের মানুষ ছুটে আসেন বাহারি ভর্তার স্বাদ নিতে।

আবু হানিফ বলেন, ‘আমি এখন কিছুটা কষ্টে আছি। করোনার কারণে দোকান ভালো চলছে না। প্রতিদিন রান্না করা খাবার অবশিষ্ট হয়ে থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির আগে প্রতিদিনে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাবিক্রি হতো। এখন প্রায় তার অর্ধেক।’

তিনি আরও জানান, ‘আমার এখানে মাছ-মাংসের চেয়ে ভর্তার আইটেমগুলা (পদ) বেশি জনপ্রিয়। তাই বেচাবিক্রি হলে খরচা বাদ রেখে কিছু টাকা থাকে। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আমি প্রতিটা খাবার টাটকা রাখার চেষ্টা করি।’

গত শুক্রবার ওই হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে ১২টা ছুঁইছুঁই। মো. পারভেজ নামে এক শিক্ষার্থী সঙ্গে তিনজন বন্ধু নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘কারোনাভাইরাসের কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় হোস্টেল ছেড়ে বাইরে খেতে হচ্ছে। তাই খেতে চলে এসেছি এখানে। আগেও খেয়েছি, ভালো লেগেছে। আবার আসলাম।’

আবু হানিফের সুস্বাদু ভর্তার হোটেলটি খুলনার দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড়ের পানির ট্যাংকির সামনে। টিনের চালা আর পলেস্তারার দেয়ালে ঘেরা পান্থশালাটি। রাস্তার পাশ থেকে হঠাৎ তাকালে মনে হবে ছোটখাটো কোনো হোটেল। দৌলতপুর এলাকায় প্রায় ১৫ বছর আগে গ্রামীণ আবহ নিয়ে চালু হয় ভর্তা-ভাতের হোটেলটি।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!