নগরীর কদমতলা ও ট্রাক টার্মিনাল আড়তে আলুর মজুদ ক্রমাগত কমছে। শুধুমাত্র রাজশাহী থেকে আলু আসছে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশী হওয়ায় আলু কোল্ডস্টোরেজে মজুদ রয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে স্থানীয় আড়তে আলুর মূল্য ৭৫ শতাংশ কমেছে। গেল বছর এসময়ে প্রতি কেজির মূল্য ছিল ৫০ টাকা, যা বর্তমানে সাড়ে বারো টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গতবছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আলুর মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ৩০ টাকা থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতি কেজির মূল্য দাড়ায় ৫০ টাকায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন দফায় দফায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। কোনদিন সকাল-বিকেল ট্রাক ভর্তি পুলিশসহ ম্যাজিস্ট্রেট আড়তগুলোতে হানা দেয়। কদমতলার ৬টি আড়তে জরিমানাও করে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে ঐসময় কোথাও আলু পাওয়া যায়নি। নিউমার্কেট, শেখপাড়া বাজার ও নতুন বাজারে ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় সেদিন ২৫ শতাংশ আলু ক্রয় করে। আলুর সেবছর ভাল দাম পাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া ও রাজশাহীতে এবার দ্বিগুন উৎপাদন হয়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশী হওয়ায় কোল্ডস্টোরেজেই আলু মজুদ রয়েছে। ঝিকরগাছা, গদখালী ও স্থানীয় শিরোমনি গুদাম থেকে লোকশানের ভয়ে মজুদদাররা আলু বের করছেন না। দৌলতপুর কোল্ডস্টোরেজ, খুলনা আইস, এবি ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইউনিয়ন ট্রেডিং কোল্ডস্টোরেজে আট’শ মেট্রিকটন আলু মজুদ রয়েছে।
স্থানীয় আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তিনটি কারণে মূলতঃ আলুর বাজার নিম্নমূখী। প্রথমতঃ চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশী, দ্বিতীয়তঃ করোনা মহামারী প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে হোটেল রেস্তোরা বন্ধ থাকায় আড়াইমাস বিক্রি বন্ধ এবং তৃতীয়তঃ বিদেশে চাহিদা না থাকা।
নিউ মায়ের দোয়া বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক আব্দুর রশিদ খান জানান, শুধুমাত্র রাজশাহী থেকে আলু আসছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আলুর উৎপাদন বেশি হয়। এত আলুর চাহিদা দেশে নেই। উত্তরাঞ্চল থেকে দু’শ পঞ্চাশ বস্তা বোঝাই এক ট্রাক আলু খুলনায় পৌঁছাতে ফড়িয়াদের লোকসান হয় আশি হাজার টাকা। ফড়িয়ারা লোকশন এড়াতে প্রতিদিনের তুলনায় সপ্তাহে একদিন খুলনায় আলু পাঠাচ্ছে। তিনি জানান, গতবছর প্রতিকেজি পঞ্চাশ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমারন সাড়ে বারো টাকা দরে বিক্রি হয়। স্থানীয় আড়তগুলোতে আলুর মজুদ কমে এসেছে। তাছাড়া সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে ওল, কচুরমুখী, চিচিংগা, জিংগে ও পটল আশায় আলুর চাহিদাও অনেকটা কমেছে।
জবেদ আলী এন্ড কোম্পানীর ম্যানেজার গিয়াস কামাল জানান, এ বছরের ১৮ জানুয়ারি ডায়মন্ড জাতের আলু প্রতিকেজি বার থেকে সাড়ে তের টাকা, গোল আলু প্রকারভেদে নয় থেকে দশ টাকা দরে, জুন মাসে সতর থেকে সাড়ে সতর টাকা দরে, জুলাই মাসে চৌদ্দ থেকে পনর টাকা দরে, আগস্ট মাসে তের থেকে চৌদ্দ টাকা দরে, আজ বারো টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই সূত্র জানায়, নভেম্বর মাসে উত্তরাঞ্চল থেকে নতুন আলু আসতে শুরু করবে। তখন পুরানো আলুর চাহিদা থাকবে না। কোল্ডস্টোরেজে বস্তা বোঝাই আলুর বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে মজুদদারদের।
খুলনা গেজেট/ এস আই