খুলনা রেল স্টেশনে টিকিট কালোবাজারির বিষয়ে ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মাস্টারের সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় স্টেশন মাস্টারকে শোকজ করা হয়েছে। একইসঙ্গে খুলনা রেলের ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারি করার অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে চারজনসহ মোট ৫ জনকে বৃহস্পতিবার বিকালে বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের ট্রেন এক্সামিনার (টিএক্সআর) বায়তুল ইসলামকে চিলাহাটি, সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. আশিক আহম্মেদকে রোহানপুর স্টেশন, সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেনকে মহেড়া স্টেশন, খালাসি মোল্লা পপিদুর রহমানকে পাবর্তীপুর ও খালাসি জাফর ইকবালকে যশোরে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে রোববার (২২ মে) রাতে মতবিনিময়কালে খুলনা রেল স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের স্টেশনে সম্প্রতি একটি কালোবাজারি চক্র ধরা পড়েছে। আপনারা অবগত আছেন। বিষয়টা রেল ও সরকারের জন্য দুঃখজনক ব্যাপার। অনেকদিন থেকে কিছুটা নলেজে আসছিল। কিন্তু ঈদের আগে থেকে ওরা এতো বেপরোয়া হয়ে গেছিল, সেই বিষয়টা প্রশাসন ও আমাদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু তেমন একটা সুবিধা হয়নি। শেষপর্যন্ত ওরা যখন আমাকে শারিরীকভাবে নির্যাতনের চেষ্টা করল। বিষয়টি আমি বুঝতে পারলাম যে ওরা আমাকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করবে। ওরা কাউন্টারে আমার কাছ থেকে জোর করে টিকিট দেওয়া লাগবে বলে চাপ প্রয়োগ করে। ওদের বেআইনী দাবি, কথা মানতে পারিনি। তখন আমার উপর শারিরীক নির্যাতনের পরিকল্পনা করে। বুঝতে পেরে আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালাম। মৌখিকভাবে জানানোর পর উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বললো ঠিক আছে, আপনি একটা জিডি করে রাখেন। আমি জিডি করার ভিত্তিতে পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসন, ম্যাজিস্ট্রেট জেনেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা বদলি হয়ে যাওয়ার পরে বিভিন্ন মিডিয়াতে অনেকসময় ভুল বক্তব্য দিচ্ছে। এতে খুলনা গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের স্টাফদের দুর্নাম হয়। তারা বলছে, যে মাস্টারের কালো বিড়াল থলে থেকে বের হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে একটি টিকিট নিয়ে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছিল। সেটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত গড়ায়। দুদক ৩১ বার তদন্ত করে দেখে মানিক চন্দ্র সরকারের বিলের পৌনে ২ কাঠা জমি ছাড়া কোন জমি নেই। আমার কথা হচ্ছে ব্যাংক-ব্যালেন্স ১০০ কোটি টাকা এসব ফাউ কথা বলে লাভ কি ? বের করে দিক তো। কালো বিড়াল, থলে না থাকলে কি করে বের হবে ? এক কেজি চাল থাকলে এক কেজিই বের হয়। ১০০ কোটি টাকা বিরাট প্যাপার। ইদানিং বলছে কি ? পুরাতন স্টেশনে লঞ্চ ঘাটে ২০১৭ সালে তেল চুরি হয়েছে ওটা তো আমার জানা ছিল না। আমি পরবর্তীতে পত্র-পত্রিকায় শুনেছিলাম।
স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র আরও বলেন, স্টেশনে একটা তেলের এরেজমেন্ট থাকে। শুধু খুলনা নয়, সারা দেশে এই তেলের জ্বালানোর বিভিন্ন কার্যক্রম থাকে। কালোবাজারির বিষয়টি ভিন্ন দিকে নিতে তেল চুরির বিষয়টি বলছে। সরকারি ম্যানেজমেন্টে ব্যবহার হয়। এতে রেলে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমি স্টেশনে কালোবাজারি ও দুর্নীতি নিজেও করি না, কাউকে করতেও দিই না।
তিনি বলেন, রেলওয়ের টিকিটের জন্য কোন কোটা নেই। শুধু কর্মচারীদের ২ শতাংশ টিকিট রয়েছে। মানুষ টিকিট পাওয়ার জন্য আমার কাছে আসে, আমি লিখে রাখি। কিন্তু সবাই যে টিকিট পায় সেটি নয়। টিকিট থাকলে কাউন্টার থেকে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমি টিকিট কালোবাজারির সাথে যুক্ত না।
স্টেশন মাস্টার বলেন, কেরোসিন তেলের জন্য আমাদের একটি বাজেট রয়েছে। আগে ৯ হাজারের কিছু বেশি বাজেট ছিল, এখন ১১ হাজারের বেশি বাজেট রয়েছে। টাকা বিভিন্ন ডিপার্ট মেন্টে ভাগা দিতে হয়। কোন মানুষকে নয়, বিভিন্ন কাজের জন্য দিতে হয়। তেল কিনা হয় না, অফিসের কাজের জন্য ব্যয় করে।
তিনি বলেন, আমি নিজেও কালোবাজারি করি না, করতেও দেই না। খুলনা স্টেশনের সুনাম আছে। টিকিট সবসময় কালোবাজারি হয় না, তবে এই ঈদের সময়ে এমনটা দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার ট্রেনের টিকেট কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে খুলনা রেল স্টেশনের ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে খুলনা রেলওয়ে থানায় জিডি করেন।