ভোজ্য তেলের দাম প্রতিমাসে হু হু করে বেড়ে চলেছে। দীর্ঘ হচ্ছে টিসিবির ট্রাকসেলের লাইন। নিম্নবিত্তের সাথে যুক্ত হচ্ছে মধ্যবিত্ত। এই সুযোগে ট্রাকসেলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি চক্র। যারা ছদ্মবেশে লাইনে ভিড় করছে। আর এদের কারণে পণ্য কিনতে পারছেনা সাধারণ ক্রেতারা। অনেকক্ষেত্রে এ চক্রের সদস্যদের মারমুখী আচারণেরও শিকার হচ্ছেন প্রকৃত ক্রেতারা।
সপ্তাহিক ছুটি ব্যতিত মাসের প্রথম থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির কার্যক্রম। প্রতিদিন পাঁচটি ট্রাকের প্রতিটিতে ৫শ’ কেজি চিনি, ৪শ’ কেজি ডাল ও ৬শ’ লিটার তেল দেওয়া হয়। টিসিবি’র গোডাউন থেকে ট্রাকগুলোর স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সাধারণ ক্রেতারা পণ্য বিক্রির খবর জানতে না পারলেও জানতে পারে বিশেষ এ চক্র। টিসিবি’র প্রশাসনিক দূর্বলতার কারণে এদের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেরে এ বাংলা রোডে চলছিল টিসিবি’র পণ্য বিক্রির কার্যক্রম। শোভা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান সেখানে দাঁড়িয়ে তেল, ডাল ও চিনি বিক্রি করছিল। আশপাশের সাধারণ মানুষ হামাগুড়ি দিয়ে এসেছিল পণ্য ক্রয় করতে। কিন্তু দালাল চক্রের মাত্রাতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করার কারণে সাধারণ অনেকেই কিনতে পারেনি।
ওই স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ঐ চক্রের সদস্যরা বস্তাভরে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেখা যায় কয়েকজন একত্রিত হয়ে এক নারীকে মারধর করছে। জিজ্ঞাসা করলে উত্তর মেলে, সে ফড়িয়া। এখান থেকে কমদামে তেল ক্রয় করে দোকানে গিয়ে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করে। এর কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় অপর এক ব্যক্তিকে কয়েকজন লোক মারধর করছে। জানা যায়, সেও ঐ চক্রের সদস্য।
নগরীর জিন্নাহপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোশারেফ হোসেন খা জানান, টিসিবি’র পণ্য কিনতে খুব ভোরে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তার অবস্থান সামনের দিকে যাচ্ছেনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একজন নিলে পাঁচজন এসে লাইনে অবস্থান নেয়। দলে তাদের সংখ্যা বেশী। কথা বলতে গেলে মারমুখী আচরণের শিকার হতে হয়।
একই দিনে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায় নগরীর আহসান আহমেদ রোড সেন্ট যোসেফস স্কুলের সামনে। সেখানের চিত্রও দেখা যায় একই রকমের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ফড়িয়ারা নগরীর গল্লামারী, রেলওয়ে বস্তি, রূপসা ও জেলখানা ঘাট পার হয়ে ট্রাকসেলের সামনে ভিড় করে। এদের একজন সদস্য লাইনের ভেতরে প্রবেশ করা মাত্র অন্য সদস্যরা পরপর দাঁড়িয়ে পড়ে। পণ্য নেওয়ার জন্য প্রতিটি ট্রাকের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তাদের নিয়োজিত প্রতিনিধিদের ইজিবাইক। প্রতিটি ডিলারের সাথে রয়েছে এদের যোগাযোগ।
অভিযোগ আছে, রূপসা উপজেলার রহিমনগরের ২২ জন এ চক্রের সাথে জড়িত। এদের প্রধান মন্টু মিয়া। রেলওয়ে কলোনি থেকে আসে আরও ২৫ জন। এদের প্রধান ঝর্ণা বেগম। নতুন বাজার এলাকায় রয়েছে ঝুমুর বেগম। আর এদের সহযোগিতা করে মো: শফিউল্লাহর ট্রাক সেলের সদস্য এলাহিসহ আরও বেশ কয়েকজন।
খুলনা গেজেট/ এস আই