দেশব্যাপী গণটিকা প্রদান কার্যক্রম (১ দিন ১ কোটি) এর অংশ হিসেবে খুলনা মহানগরীতেও গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনার সংক্রমণরোধে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দিতে নগরীর অনেক টিকা কেন্দ্রে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নগরবাসি। ভিড় ঠেকাতে বিভিন্ন কেন্দ্রে পুলিশ নিয়োজিত করা হয়। তারপরও বিশৃঙ্খলা ঠেকানো যায়নি। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে এই টিকাদান কর্মসূচী। তবে বিকেলে স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, প্রথম ডোজের গণটিকা কার্যক্রম আরও দুদিন বাড়িয়ে চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক কেসিসি পরিচালিত খালিশপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গণটিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি টিকা গ্রহণের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ পরিপূর্ণভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য বিধি অনুসরনের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
তবে সকাল থেকে খুলনা নগরীর টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। সেখানে ছিল না কোন সামাজিক দুরত্ব। অনেকের মুখে মাস্ক দেখতে পাওয়া যায়নি। নগরীর শেরে এ বাংলা রোডস্থ নগর স্বাস্থ্য ভবনের সামনে দেখা যায় অসংখ্য মানুষের ভিড়। ভিড়ের কারণে সেখানে যানজট সৃষ্টি হয়। আশপাশের দোকানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়। অনেকেই তাদের দোকানের সামনে থেকে টিকা গ্রহীতাদের রাস্তার ওপর নামিয়ে দেন। ঝামেলা এড়াতে স্বাস্থ্য ভবনের মূল ফটক সামান্য খুলে একজন করে ভেতরে নেওয়া হচ্ছে। সময় পার হওয়ার সাথে সাথে ভিড়ও বাড়ে।
সেখানে কথা হয় দারুল উলুম মাদ্রাসার একজন শিক্ষার্থীর সাথে। তিনি বলেন, “না জেনে প্রথমে ওয়ার্ডে নিয়োজিত টিকাকেন্দ্রে গিয়ে সময় নষ্ট করেছি। এরপর জানতে পেরে এখানে আসা। এখানে প্রচুর ভিড়। নিয়মের কোন বালাই নেই। মাঝেমধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। প্রায় তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে অবশেষ টিকা নিলাম। তবে সবাই একসাথে টিকা নিতে চায়। যা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই এখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।”
নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে কথা হয় রহিমের সাথে। তিনি জানান,“ কোথাও কোন শৃঙ্খলা নেই। আজ শেষদিন শুনে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে টিকা দেওয়ার জন্য। এখানে যে পরিমাণ ভিড়, তাতে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা নিতে এসে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি যাব কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। ”
সংরক্ষিত নয় নম্বর ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলার মাজেদা খাতুন জানান, “সকাল থেকে টিকা গ্রহীতারা এ কেন্দ্রে আসছে। গত দু’দিন মাইকিং ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের প্রতিনিধিরা টিকা নেওয়ার ব্যাপারে মানুষকে জানিয়েছে। সকাল থেকে শৃঙ্খলার সহিত সিটি কর্পোরেশন নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীরা টিকা দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে কোন বিশৃঙ্খলা নেই।”
অপরদিকে নগর স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন জানান, প্রথম ডোজের আজ শেষদিন। গণ টিকায় মানুষকে আজ সিনোভ্যাক্স ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। খুলনার ৩১ টি ওয়ার্ডে ২৭৯ টি অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ১২ থেকে ১৮ বছরের মানুষের নগর স্বাস্থ্য ভবন ও টুটপাড়া মাতৃসদন কেন্দ্র নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য অস্থায়ী কেন্দ্র করা হয়েছে। আজ প্রতিটি ওয়ার্ডে সাড়ে চার হাজার মানুষকে টিকাদান করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ২ জন টিকাদার, ৩ জন ভলেন্টিয়ার ও ৫জন মবিলাইজার নিয়োজিত করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৫’শ জন করে সর্বমোট ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫’শ জনকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুপুর তিনটা পর্যন্ত চলবে টিকাদান কর্মসূচী। যাদি কোন কেন্দ্রে মানুষের ভিড় অতিরিক্ত থাকলে সেটি বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা রাখা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৮শ’র মতো ভ্যকসিন দেওয়া হয়েছে। পরে চাহিদা অনুযায়ী সেখানে ভ্যাকসিন পাঠানো হচ্ছে। খুলনায় সাতটি স্থায়ী ও বাকীগুলো অস্থায়ী কেন্দ্রে। তবে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছ। প্রশাসনের লোকজন দায়িত্বে সাথে কাজ করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই