খুলনা নগরীর হরিণটানা এলাকায় অটো গ্যাস পাম্পের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এলপি গ্যাসের অবৈধ ‘ক্রস ফিলিং’। ঝুঁকিপূর্ণভাবে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বাজারজাতকরণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঝুঁকি বাড়ছে। সেই সাথে কম ওজনের গ্যাস কিনে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অটো গ্যাস পাম্পে এ ধরনের ফিলিং প্রক্রিয়া যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি ব্যবহারও ঝুঁকিপূর্ণ। ভোক্তাদের নিরাপত্তার কথা না ভেবেই অধিক মুনাফার আশায় অসাধু ব্যক্তিরা এ ধরনের বিপজ্জনক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।
এদিকে গতকাল খালিশপুরে বিভিন্ন ব্রান্ডের ঝুঁকিপূর্ণ ৬৩টি এলপিজি সিলিন্ডারসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে ওমেরা গ্যাস কোম্পানীর ৪৪টি সিলিন্ডার, লাফস ১৫টি ও যমুনা কোম্পানীর ৪টি সিলিন্ডার রয়েছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অবৈধভাবে ফিলিং করা এলপিজি সিলিন্ডার মজুদ করায় তাসমিম হাসান মিলন নামের ব্যক্তিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন এ শাস্তি প্রদান করেন।
জানা যায়, নগরীর হরিণটানা এলাকায় সুরাইয়া ফিলিং স্টেশনে (অটো গ্যাস পাম্প) দীর্ঘদিন বিভিন্ন ব্রান্ডের সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস ফিলিং ও বাজারজাত করা হচ্ছে। ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের টেরিটরি অফিসার মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সুরাইয়া ফিলিং স্টেশনে মাইক্রোবাস প্রাইভেটকার সিএনজিতে গ্যাস সরবরাহ করার কথা। কিন্তু রাতের আঁধারে তারা এলপিজি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বাজারে বিক্রি করছে। অনুমতিপ্রাপ্ত কোম্পানিতে স্বয়ংক্রিয় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে সিলিন্ডারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এলপি গ্যাস বাজারজাত করা হয়। আর চক্রটি করছে যেনতেন প্রক্রিয়ায় তা বাজারে বিক্রি করছে। ফলে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনাও ঘটছে।
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে অবৈধ উপায়ে ফিলিং করা এলপিজি সিলিন্ডারসহ মিনি ট্রাকটি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গাড়ি চালক মোহাম্মদ উল্লাহ, কর্মচারি শরিফুল ইসলাম ও তাসমিম হাসান মিলনকে আটক করা হয়। যারা ঝুঁকিপূর্ণ ক্রস ফিলিংয়ে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধভাবে বোতলজাত এলপিজি সিলিন্ডার খুলনা শহর ও শহরতলি বাজারে বিক্রি করা হয়। তুলনামূলক দুর্গম এলাকার বাজারে বিক্রির পরিমাণ বেশি। নির্দিষ্ট কিছু ডিলার এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাদের বাইরে অন্য কারো কাছে বিক্রি করা হয় না।
যমুনা এলপি গ্যাসের সহকারি ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম রাজু জানান, প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার ক্রস ফিলিং করা সিলিন্ডার খুলনায় বাসাবাড়িতে বিক্রি হয়। হাই প্রেশার রিফিল মেশিন না থাকায় অটো গ্যাস পাম্পে ১২ কেজির সিলিন্ডারে ৮ থেকে ৯ কেজি গ্যাস রিফিল করা হয়। ঘাটতি মেটাতে সিলিন্ডারে পানি দিয়ে ওজন বাড়ানো হয়। এতে গ্রাহকরা প্রতারিত হয়। কোম্পানী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারায়।
লাফস কোম্পানীর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. ইমরান হোসেন বলেন, অবৈধ ক্রস ফিলিং করা গ্যাস বাজার মূল্যের থেকে কমমূল্যে বিক্রি হয়। এতে এলপি গ্যাসের বাজার দর অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৈধ গ্যাস কোম্পানিগুলো। এলপি গ্যাসের ঝুঁকি কমাতে এ ধরনের ক্রস ফিলিং বন্ধ হওয়া জরুরি।
খুলনা গেজেট/ টি আই