সাত কেজি একশ’টাকা! নগরীতে গত কয়েকদিন ধরে হাকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন হকাররা। আড়তে দাম আরও কম। দ্রব্যমূ্ল্যের উর্ধগতিতেও আলু বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। পণ্যটির দর পতনে মাথায় হাত উঠেছে উত্তরের কৃষকদের, চলছে বোবা কান্না। ভবিষ্যতে আর আলুর চাষের সাথে যুক্ত হবেন না বলে জানিয়েছেন সেখানকার কয়েকজন কৃষক।
খুলনার খুচরা দোকানে আলু প্রতিকেজি ১৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা দরে। গত বছরে এ সময়ে প্রতিকেজি আলু ২৬ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
আলুর বাম্পার ফলন দেখে চোখে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখেছিলেন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার শামসুল হক। কিন্তু দরপতনে সে স্বপ্ন তার বিলীন হয়েছে। গত ৩০ বছর যাবত তিনি আলু চাষের সাথে যুক্ত। কখনও তিনি এমন দর পতন দেখেননি। এবার তিন বিঘা জমি চাষ করেছেন। কৃষাণ, সার ও বীজসহ প্রতিবিঘায় তার খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। প্রতিবিঘায় দু’হাজার দু’শ কেজি আলু পেয়েছেন। আলু পেলেও বিঘাপ্রতি তার ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
নগরীর স্টেশন রোড কদমতলা কাঁচা বাজারের মেসার্স হাজী জাবেদ আলী মোড়ল বাণিজ্য ভান্ডারে আজ শুক্রবার গিয়ে দেখা যায় নীলফামারী জেলার কয়েকজন কৃষক হতাশ হয়ে বসে আছেন। সেখানে সকলের মাথায় হাত ছিল। কৃষক আশরাফ আলী ঋণগ্রস্থ হয়ে ১০ বিঘা জামিতে আলু চাষ করেছিলেন। মহাজনের এ টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত। গত ৪০ বছর ধরে তিনি আলু চাষের সাথে জড়িত। এখানে এসে দাম সাড়ে আট টাকা থেকে নয় টাকা শুনে তার ‘মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়া’র মতো মনে হয়েছে। তাছাড়া এখানে প্রতিবস্তা নামাতে তাকে কুলিকে ১৩ টাকা আর আড়তদারকে প্রতিকেজিতে ত্রিশ পয়সা করে দিতে হয়।
নীলফামারী জেলার ২ নং কাশিরাম বিলপুকুর ৩নং ওয়ার্ড চওড়াপাড়া এলাকার কৃষক মো: আশরাফ আলী জানান, গত বছর এ পণ্যটি ব্যাপারীরা মাঠ থেকে ক্রয় করেছেন ২৪ টাকা দরে। এবার সেটি খুলনায় এনে তাকে সাড়ে আট থেকে নয় টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আলুর দর পতনে তার বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা লস হবে। আলু বিক্রি করে তার ট্রাক ভাড়াও উঠবেনা।
মেসার্স হাজী জাবেদ আলী মোড়ল বাণিজ্য ভান্ডারের ম্যানেজার মো: গোলাম মোস্তাফা বলেন, নতুন আলুর উৎপাদন এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশী। নতুন এ পণ্যটি বেশীদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। প্রতিদিন খুলনার এ বাজারে ৩০ গাড়ি আলু আসছে। ২৫ গড়ির কম হলে দাম বেশী থাকত। তবে এ আলু শেষ হতে আগামী সপ্তাহ লাগবে। তারপরে এ পণ্যটির দাম বাড়তে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই