খুলনার ঐতিহ্যবাহী শহিদ হাদিস পার্কে বসেছে সৌখিন মৎস্য শিকারিদের মিলনমেলা। সাত সকালে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য শিকারিরা জড়ো হয় হাদিস পার্কে। মাছ ধরার পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই দেখতে এসেছেন। মানুষের সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে হাদিস পার্কে।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) ভোর ৫টায় শুরু হয় পার্কের পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। খুলনা সিটি করর্পোরেশন (কেসিসি) এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, শহিদ হাদিস পার্কে মাছ শিকারীদের ১৯৯টি আবেদনের বিপরীতে ৩৫টি ঘাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি ঘাটের মূল্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। কেসিসি ৩৫টি ঘাটের মধ্যে ২৫টি বিক্রির জন্য লটারি করেছিল। সেগুলোর মধ্যে লটারি করে ২৫ জনকে ঘাট দেওয়া হয়। বাকি ১০টি ঘাট সংরক্ষিত। তবে তা বিনামূল্যে নয়। সবগুলো ঘাটই বিক্রি হয়েছে। মাছ শিকারের জন্য ঘাট বিক্রি করে কেসিসি সাড়ে ১৭ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। একটি ঘাট কিনলে ক্রেতা তিনদিন মাছ ধরতে পারবেন। সেই তিন দিন হচ্ছে- শুক্রবার (১৯ নভেম্বর), ৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ও ১৭ ডিসেম্বর (শুক্রবার)।
দিঘলিয়া থেকে ৫-৬ জনের একটি টিম নিয়ে এসেছেন মো. ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, বড়শিতে তেমন মাছ উঠছে না। তিন দিন মাছ ধরা যাবে। আজ প্রথম দিন। মাছ ধরতে এসে খুব ভালো লাগছে। বড় মাছ ধরার চেষ্টা চলছে। ১ থেকে ১০ কেজির মাছ রয়েছে এখানে। বড় মাছ ধরতে পারলে পুরস্কার রয়েছে। ভোর ৫টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১০/১১টি মাছ ধরেছি।
মাছ শিকার দেখতে এসেছেন খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ পার্ক খুলনার একেবারেই প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই পার্কে মাছ শিকারের আয়োজন করা হয়েছে। আজ বন্ধের দিন তাই উৎসাহী মাছ শিকারি ও জনগণ এখানে এসেছেন। একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। খুলনা সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানাই এই আয়োজনের জন্য। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে সেটাই প্রত্যাশা।
মাছ ধরা দেখতে এসেছেন নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, দারণ এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এক মনোরম পরিবেশ। তবে সেই তুলনায় মাছ উঠছে না। আশা করি পরবর্তী সময়ে মাছ উঠবে।
কেসিসির প্যানেল মেয়র মো. আলী আকবর টিপু বলেন, হাদিস পার্কের পুকুরে সৌখিন মৎস্য শিকারিরা ৩৫টি ঘাট কিনেছেন। প্রতিটি ঘাটের মূল্য ৫০ হাজার টাকা। শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে মৎস্য শিকার চলছে। মানুষের উপস্থিতি আয়োজনকে সার্থক করেছে।
সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সন্ধ্যা ৬টায় শহীদ হাদিস পার্কে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। সিটি মেয়র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীসহ উপস্থিত সকলকে অভিনন্দন জানান এবং আগামীতেও এ ধরণের আনন্দমুখর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতায় শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন ১ম, বিপ্লব বৈরাগী ২য় এবং মো: হাফিজুর রহমান ৩য় স্থান অধিকার করেন। সিটি মেয়র পুরস্কার হিসেবে ১ম স্থান অধিকারীর হাতে ৪৩ ইঞ্চি এলইডি টিভি, ২য় স্থান অধিকারীর হাতে স্মার্ট ফোন এবং ৩য় স্থান অধিকারীর হাতে হুইল সেট তুলে দেন।
কেসিসি’র মেয়র প্যানেলের সদস্য ও মৎস্য শিকার আয়োজক কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো: আলী আকবর টিপুর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কাউন্সিলর মো: শামছুজ্জামান মিয়া স্বপন, মো: সুলতান মাহামুদ পিন্টু, এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদারসহ নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কয়েক হাজার দর্শক এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করে।
খুলনা গেজেট/ এস আই