খুলনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্দ্ধমুখী। অদৃশ্য এই ভাইরাসের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম পর্যায়েও। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে ঝড়ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। হাসপাতালে ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি রয়েছে। ফলে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ২টি হাসপাতালে খালি নেই আইসিইউ বেড। পরিপূর্ণ রয়েছে এইচডিইউ বেডও। হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকায় সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও সেবিকাদের।
জানা গেছে, খুলনায় বতর্মানে তিনটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে চলছে করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা। এই চারটি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৪০৫টি। এরমধ্যে খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১৩০টি, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৮০টি, খুলনা আবু নাসের হাসপাতালে ৪৫টি ও বেসরকারি গাজী মেডিকেল হাসপাতালে ১৫০টি শয্যা রয়েছে। যার মধ্যে ২টি সরকারি হাসপাতাল ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৪০টি আইসিইউ বেড। এরমধ্যে খুলনা ১৩০ শয্যার ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ শয্যা ও শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। তবে এ দুটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত মুমুর্ষ রোগীর চাপ থাকায় খালি নেই আইসিইউ বেড। এ অবস্থায় নতুন করে কোন মুমুর্ষ রোগী আসলে তাদের আইসিইউ বেড খালি হওয়া সাপেক্ষে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, খুলনার হাসপাতালে বিভাগের সবজেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসা নেয়। রোগীদের চাপ বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে সরকারি হাসপাতালে অনেক বেশি। এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড বাড়ানো এখন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
রোগীর স্বজনেরা বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হলে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যবৃত্ত পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। যে কারণে তারা বেশিরভাগই সরকারি হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন। তবে রোগীর চাপ বেশি থাকায় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে।
খুলনা ১৩০ শয্যা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৮৮ জন। যা ধারণক্ষমতার বাইরে। যার মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে রেডজোনে ১১৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ইয়ালোজোনে ৩৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া আইসিইউতে ২০ জন ও এইচডিইউতে ২০ জন।
শনিবার (১০ জুলাই) রাত ১০টা ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ রয়েছে। আইসিইউ বেড খালি নেই। হাসপাতালে আরও ৫০টি বেড বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, হাসপাতালে ৪৫টি শয্যা রয়েছে। যার মধ্যে ভর্তি রয়েছেন ৪৪ জন রোগী। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০ জন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইসিইউয়ের ১০ শয্যায় রোগীতে পরিপূর্ণ রয়েছে। এই হাসপাতালে সাধারণ বেডের চেয়ে তুলনামূলকভাবে আইসিইউ বেডে রোগীর চাপ বেশি। আইসিইউ বেড বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এর পক্ষ থেকে ৫টি আইসিইউ বেড বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের ৮০ শয্যার মধ্যে চিকিৎসাধীন ছিল ৭৬ জন। তার মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ ও ৩৯ জন নারী।
বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে
চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৩০ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন সাতজন ও এইচডিইউতে আছেন ১১ জন।
খুলনা বিভাগে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল আহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা রোগীর সংখ্যা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বহু মানুষ বাড়িতেই সেবা নিচ্ছেন। গ্রামের মানুষগুলো মাস্ক পড়ে না আবার সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে এই মানুষগুলো আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামাঞ্চলের রোগীরা শেষ মুহুর্তে হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন। যেসকল রোগী গ্রাম থেকে আসছে তাদের শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি যখন খুব বেশি হচ্ছে তখন তারা হাসপাতালে আসছেন। যা কারণে তাদের হাইফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ছে। কারও যদি সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তাদের পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। যদি পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হয় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।