যশোরের পুরাতনকসবা কাজীপাড়া নিরিবিলি এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া মানব কঙ্কালের পরিচয় উদঘাটনের বিষয়টি যশোরাঞ্চলে ব্যাপক আলোচিত ছিল। খুন ও গুমের ৬ বছর পর খুলনার দিঘলিয়ার হতভাগ্য যুবক রাজীব হোসেন কাজীর (৩২) কঙ্কালটি শনাক্ত হওয়া এবং এ ঘটনায় তার খোদ অফিস মালিক জড়িত। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই যশোরের সদস্যরা ওই কর্মস্থল মালিক সজীবকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়েছে। এছাড়া ১৭ জানুয়ারি আটক রিকসা চালক সালামের তথ্যে এ হত্যায় জড়িত আরো দু’জনকে আটক করা হয়েছে।
১৮ জানুয়ারি এক ব্রিফিংয়ে পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেছেন রাজিব হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
গত বছরের ৩০ মে দুপুর ১২টার দিকে যশোর শহরের কাজীপাড়া নিরিবিলি এলাকার বজলুর রহমানের জমিতে নির্মাণ কাজের সময় শ্রমিকরা ড্রামভর্তি মানুষের কঙ্কাল দেখতে পান। কঙ্কাল উদ্ধারের পর থেকেই এটি হত্যাকান্ডের আলামত বহন করছে বলে পুলিশ দাবি করে। অন্য কোথাও থেকে অজ্ঞাত কাউকে অপহরণ করে হত্যা পর লাশ গুম করা হয়েছে। এ ঘটনায় কারা জড়িত খুঁজে বের করতে হবে বলে দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
এ ঘটনায় ছায়া তদন্তের সময় পিবিআই যশোরের টিম জানতে পারেন দিঘলিয়ার রাজীব হোসেন কাজী তার চাচা হাসমতের বাসায় থেকে পুরাতন কসবা আবু তালেব সড়কের সজিবুর রহমানের অফিস ও বাসায় কাজ করতেন। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাত ৮টায় রাজীব তার বাবাকে ফোন করে তাদের খুলনার বাড়িতে যাচ্ছে। কিন্তু রাজীব খুলনায় যাননি। সে বাড়িতে না গেলে বাবা ফারুক হোসেন ছেলে রাজীবের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। তার ভাই হাসমত জানান, ২৯ মার্চ থেকে রাজীবকে তারাও পাচ্ছেন না। কয়েকদিন পর রাজীবের মা মাবিয়া বেগম ছেলের খোঁজে যশোরে আসেন। তিনি ও চাচা হাসমত অফিস মালিক সজীবের বাসায় গিয়ে খোঁজ করলে কিছুই জানেন বলে জানান।
ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই তথ্য পায় তড়িঘড়ি করে সজীব তার বাড়ি ও অফিস বিক্রি করে দেন। গত বছরের ৩০ মে পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়ার বজলুর রহমানের যে পরিত্যক্ত পুরাতন টয়লেটে ড্রামের মধ্যে কঙ্কাল পাওয়া যায় সেটি রাজীবের। সেই জায়গাটির মূলত আগের মালিক ছিলেন রাজীবের অফিস মালিক শেখ সজীবুর রহমান। রাজীব নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর সজীব তার অফিসও ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। রাজীবের বাবা ফারুক হোসেন তার ভাই হাসমত ওই তথ্য জেনে যশোরে আসেন। ওই প্রাথমিক ক্লু থেকে তদন্ত এগুতে থাকে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে রাজীবে পরিচয় শনাক্ত করে ১৭ জানুয়ারি প্রকাশ করে পিবিআই। এছাড়া হত্যায় জড়িতদেরও শনাক্ত করা হয়। হত্যার পর লাশ গুমের উদ্দেশ্যে বহন করা রিকসা চালক সালাম হোসেনকে (৫৫)আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যে কঠোরভাবে মাঠে নামে বিপিআই যশোরের চৌকস তদন্ত টিম। ৬ বছর আগে গুম হওয়া রাজীবকে শনাক্ত করতে পারার ঘটনায় পিবিআই টিমকে সাধুবাদও জানায় যশোরবাসী।
১৮ জানুয়ারি পিবিআই পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন ব্রিফিংয়ে জানান, আাটক রিকশা চালক সালামের তথ্যের ভিত্তিতে আটক হয়েছে পুরাতন কসবা এলাকার আরো দু’জন। এরা হচ্ছে ইব্রাহিম ও জয়নাল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন হত্যা রহস্য অনেকটাই উন্মোচিত হয়েছে। মূলত রাজীবে কর্মস্থল মালিক পুরাতনকসবা সজীব হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী। সে অন্য একটি মামলায় বর্তমানে কারাগারে আটক আছে। তাকে রাজীব হত্যা মামলা শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। তাকে রিমান্ড আনা হবে। তার কাছ থেকে হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য ও কী কারণে এ হত্যা এবং গুম তা আরো পরিস্কার হবে। তাদের জানা সব তথ্য মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন পিবিআই পরিদর্শক শামীম মুসা, এসআই স্নেহাসিশ দাশ, এসআই জিয়াউর রহমান, এসআই ডিএম নূর জামালসহ অফিসারগণ।
খুলনা গেজেট/কেডি