খুলনার বড় বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে সকাল থেকেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে ছিল না সামাজিক দুরত্বের বালাই। অধিকাংশের মুখেই ছিল না মাস্ক। দোকানদারদের অনেকেই বলছেন লকডাউন ঘোষণা হওয়াতে ক্রেতাদের চাপ বেড়েছে প্রতিটি দোকানে।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩ এপ্রিল দুপুরের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সোমবার (০৫ এপ্রিল) লকডাউনের খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকে ক্রেতা বেড়েছে দোকান গুলোতে। নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য চাল, ডাল, তেলসহ আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ছোলা, চিড়া, খেজুর ও মসলার দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। অনেক ক্রেতাই অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিস না কিনেই বাড়ি ফিরেছেন।
বাজারে আসা গৃহিনী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, লকডাউন শুরু হচ্ছে, পরবর্তিতে আর বের হতে পারবো কি না এই চিন্তায় স্বাভাবিক মাসের চেয়ে একটু বেশি বাজার করলাম। তবে সামাজিক দুরত্ব ও করোনা সংক্রামনের বিষয়ে জানতে চাইলে কথা এড়িয়ে যান তিনি।
মধ্য বয়স্ক একজন মহিলা বলেন, কালিবাড়ি ঘাটের ওপার থেকে বড় বাজারে বাজার করতে এসেছিলেন তিনি। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে প্রয়োজনীয় ছোলা, পিয়াজ, মুড়ি না কিনেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাকে।
এদিকে লকডাউন এর ঘোষণা পেয়ে অন্যান্য মাসের চেয়ে অতিরিক্ত চাল, ডাল, তেলসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করছেন অনেক ক্রেতা। এমন দুজন ক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, করোনার লকডাউনের ঘোষনার কারনে ২৫ কেজির দু’বস্তা চাল, তিন কেজি ডাল, পাঁচ লিটার তেলসহ প্রয়োজনীয় মসলা কিনেছেন। সামনে লকডাউন এক সপ্তাহের জন্য দিলেও কবে ছাড়বে তার কোনো ঠিক নেই এজন্য প্রতি মাসের চেয়ে এ মাসে সবকিছু বেশি কিনেছি।
রমজান মাসের অগ্রিম কেনাকাটার জন্যও অনেক ক্রেতা বাজারে এসেছেন। তাদের অনেকেই লকডাউনের কথা মাথায় রেখে পুরো মাসের বাজার এক সাথেই সারছেন। তবে ব্যতীক্রমও ছিলেন দু একজন। লকডাউনের আতঙ্কে অতিরিক্ত পণ্য না কিনে প্রয়োজনীয় বাজারটুকুই করেছেন তারা। তারা বলেন, বাজারের দোকান যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকবে তাই অতিরিক্ত কেনাকাটা করিনি।
শুধু মুদি দোকান নয়, পাইকারি সিট কাপড়ের দোকান গুলোতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
নড়াইলের কালিগজ্ঞ থেকে কাপড় কিনতে এসেছেন দুলু বেগম নামে এক নারী কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, করোনার কারণে লকডাউন ঘোষণা শুনেই আজকে সকালে বড় বাজারে এসেছি ঈদের সিজনের জন্য ব্যবসার প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতে।
পঞ্চাশোর্ধ আহমেদ হোসেন বলেন, মৃত্যুর হার বাড়ছে, সরকার লকডাউন দিয়েছে। কিন্তু আজকে বাজারে মানুষের যে অবস্থা তাতে করোনা কমবে না বরং আরও বাড়বে।
সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানদারসহ বাজারের কুলিরা। দোকানের বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক থাকলেও কুলিদের কাছে স্বাস্থ্য বিধির কোনো বালাই নেই।
সুমন শেখ এই বাজারে কুলির কাজ করছেন তিন বছর থেকে। তিনি বলেন, গত তিন বছরের ভিতরে বাজারে এত লোকের সমাগম আগে কখনো দেখিনি। ঈদের বাজারের চেয়েও বেশি লোক হয়েছে আজ, যেনো ঠেলে ফেলা যাচ্ছে না।
হটাৎ করে গ্রাহক ও বিক্রি বাড়লেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের অবস্থাতেই আছে। অনেকেই বলেন, করোনার আশঙ্কা থাকলেও লকডাউনের কারণে বাধ্য হয়ে এই ভিড়ের মধ্যেই বাজার করতে হচ্ছে তাদের।
বিক্রি বাড়লেও সামনের দিনগুলোতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়লে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
সোহাগ বাণিজ্য ভান্ডারের চিড়া ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী বলেন, সামনে রমজান মাস আমাদের ব্যবসার একটা বড় সিজন। এক সপ্তাহের লকডাউন আমরা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু সামনে লকডাউন বাড়লে আমাদের ব্যবসায়ের চরম ক্ষতি হবে।
এদিকে সকাল থেকে অতিরিক্ত ক্রেতার ভিড় থাকায় কুলি, ভ্যান, রিকশার সংকট দেখা দেয়। যে কারণে বাজারের মূল রাস্তার পাশে চালের বস্তা ও বাজারের ব্যাগ হাতে রিক্সা ও কুলির জন্য অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেক ক্রেতাদের।
বড় বাজার ও তার আশপাশের এলাকার রাস্তাগুলোতে ছিল প্রচন্ড ভিড়। অতিরিক্ত পণ্যবাহী ভ্যান, ইজিবাইকের কারণে যানজট লেগেছিল হেলাতলা ও হেরাজ মার্কেটের দু’পাশের রাস্তায়।