খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ মাঘ, ১৪৩১ | ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার, শুরু হয়েছে ট্রেন চলাচল

খুলনার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র ‘দখল’ নিয়ে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা নগরের শান্তিধাম মোড় এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের কার্যালয় ‘দখল’ করে দলের মহানগর ও জেলা অফিসের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়েছে ভিপি নুরের গণঅধিকার পরিষদ। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে ওই ক্লাবের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দলটির নেতাকর্মীরা। পরে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের সাইনবোর্ডের জায়গায় ‘গণঅধিকার পরিষদ, খুলনা মহানগর ও জেলা কাযালয়’ লেখা একটি ব্যানার টানিয়ে দেন তারা।

খুলনা নগরীর শান্তিধাম মোড় এলাকায় পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র ক্লাবটি যে ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো সেটি মূলত গণপূর্তের একটি পুরাতন দ্বিতল ভবন। ভবনের দ্বিতীয়তলার তিনটি রুমে ক্লাবের কার্যক্রম চলতো। আর নিচ তলায় একটি সাহিত্য একাডেমি, সুরঝংকার, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং চিকিৎসক এর চেম্বার রয়েছে।

জানা যায়, পাকিস্তান আমল থেকে পঞ্চবিথি ক্রীড়াচক্র ক্লাবটি খুলনায় সুপরিচিত। খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার তালিকাভুক্ত এ ক্লাবটি খুলনায় বিভাগীয় ক্রিকেট লীগ ও প্রিমিয়ারলীগ ক্রিকেট লীগ খেলায় একাধিকবার শিরোপাজয়ী। খুলনার নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি আলী আজগর লবীসহ একাধিক ক্রীড়ানুরাগী এই ক্লাবের নেতৃত্ব থেকে পদ পেয়েছেন বিসিবি, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায়। শুরুতে শান্তিধাম এলাকায় তারের পুকুর জাতিসংঘ মাঠ এলাকায় ক্লাবটি পরিচালনা করা হলেও ২০১০ সালের দিকে গণপূর্ত বিভাগ-২ থেকে দোতলায় তিনটি কক্ষ নিজেদের নামে বরাদ্দ নেয় তারা। এরপর গত প্রায় ১৪ বছর ধরে সেখানে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের কর্মকর্তারা। তবে বিভিন্ন সময় জুয়া খেলা পরিচালনা করার অভিযোগ আছে এই ক্লাবের বিরুদ্ধে।

গত ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর ক্লাব এক প্রকার বন্ধই রয়েছে। আজ হঠাৎ তালা ভেঙে সেখানে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের প্রবেশ করায় হতভম্ব হয়ে গেছেন তাঁরা।

গণঅধিকার পরিষদের খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল এখানে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের অবৈধ কার্যক্রম চলতো। এখানে জুয়া খেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। ৫ আগস্টের পর এসব অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ক্লাবটি অবৈধভাবে জায়গাটি দখল করে আছে। এরপর আমরা আমাদের প্রক্রিয়াতে তাঁদের উচ্ছেদের জন্য বারবার বলেছি। তারা সরবে না বিধায় আমরা স্থানীয় ও আরও যেসব রাজনৈতিক দল আছে সবাইকে বলে এটাকে উচ্ছেদ করার জন্য আজ এসেছি। এখানে যেন কোনো ধরণের অনৈতিক কাজ না হয় সেজন্য আমরা আজ থেকে এখানে পাহারায় থাকবো। একইসাথে কক্ষ ৩টি গণ অধিকার পরিষদের নামে বরাদ্দ নেওয়ার জন্য গণপূর্ত ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’

তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ ও ব্যানার টানিয়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বারবার করে বলা হয়েছিল কিন্তু তারা (পঞ্চবীথি) তা শোনেনি, তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। এ কারণে এটা করা হয়েছে।’ ব্যানার টানিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘কে বা কারা পাবে, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এ কারণে ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে সেখানে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। প্রায় ৬ মাস ধরে ক্লাবটি তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। সেখানে যদি কোনো অনৈতিক কার্যক্রম চলতো তাহলে সাধারণ মানুষের সেটা জানার কথা। তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এভাবে দখলদারিত্ব জনগণ আশা করে না। এজাজিও দখলদারিত্ব অন্যের সম্পদ দখলে অসাধু ব্যক্তিদের উৎসাহিত করে এবং শান্তিপ্রিয় মানুষকে মানসিকভাবে আঘাত করে। এর ফলে দুর্বৃত্তরা সরকারি ওবে সরকারি সম্পদ দখলে উৎসাহিত হতে পারে। ফলে নগরীর শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ জাতীয় হীন কাজ পরিহারে তাদের দলীয় সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একইভাবে অন্যায় প্রতিহত ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় জন্য প্রশাসনকেও আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!