‘আমাদের যুগে আমরা যখন আকাশের তলে উড়িয়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি’- কবি সুফিয়া কামালের লেখা ‘আজিকার শিশু’ কবিতার এই দুই লাইন মনে করিয়ে দেয়, শৈশবে ঘুড়ি উড়ানোর সেই আনন্দময় স্মৃতির কথা। এমনটি বলছিলেন খুলনা মহানগরীর শিপইয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক সময় সর্বত্র ঘুড়ি উড়ানোর প্রচলন থাকলেও এখন আর তা নেই। যান্ত্রিক সভ্যতার নগ্ন থাবায় বিলুপ্ত প্রায় এই আনন্দময় খেলা।
রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে খুলনা অ্যাসোসিয়েশন অব ইনফরমেশন অব টেকনোলজি কর্তৃক আয়োজিত ও খুলনা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই ঘুড়ি উৎসব সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে। উৎসবে প্রায় একশ’ প্রতিযোগির ঘুড়ি আকাশে উড়তে দেখা যায়।
ঘুড়ি উৎসব শতশত মানুষকে বেধেছিল এক সুতোয়। ক্ষণিকের জন্যে হলেও আবদ্ধ করেছিল ভালবাসার বন্ধনে। আকাশে যেন বাহারি রংয়ের ঘুড়ির মেলা বসেছিল। বক্স, প্রিজম, ঈগল, বাদর, রকেট, স্টারসহ ঘুড়ি গুলোর রয়েছে বাহারি নাম। অনেকেই বাড়ির ছাঁদ থেকে ঘুড়ি উৎসব উপভোগ করছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘুড়ি উৎসবের উদ্বোধন করেন, খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। তিনি বলেন, কালের আবর্তে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য ঘুড়ি উৎসব তা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা শহরের তরুণ প্রজন্ম রয়েছে, তারা অনেকেই জানে না এই ঘুড়ি জিনিসটা কী? ঘুড়ি সম্পর্কে তরুন প্রজন্ম যাতে জানতে পারে সেজন্য এমন আয়োজন করা হয়েছে।
ঘুড়ি উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন খুলনা মহানগরীর খালিশপুর এলাকা থেকে আসা রকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি এখানে কামরাঙ্গা ঘুড়ি নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি। শহরে থাকায় আমরা এমন গ্রামীন পরিবেশ পাই না। প্রথম বারের মতো ঘুড়ি উৎসবে অংশগ্রহণ করে খুব ভালো লাগছে।
তিনি আরও বলেন, ঘুড়ি এক প্রকারের হাল্কা খেলনা, যা সুতা টেনে আকাশে ওড়ানো হয়। পাতলা কাগজের সঙ্গে বাঁশ থেকে বানানো চিকন কঞ্চি লাগিয়ে সাধারণত ঘুড়ি তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন উপাদান ও নকশার ঘুড়ি রয়েছে।
স্মৃতির কথা জানিয়ে ঘুড়ি উৎসব দেখতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের শেষে বসন্তের আগমনে দখিনা মলয় হিল্লোলে প্রকৃতি যখন জেগে উঠতো, তখন গ্রামের বিলগুলোতে চলতো ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। প্রত্যেক কিশোরের হাতে থাকতো লাটাই ও সুতা।
আয়োজকরা জানান, এক সময় শিশু কিশোরদের প্রধান বিনোদন ছিলো ঘুড়ি উড়ানো। সময়ের বিবর্তনে আজ তা বিলুপ্ত প্রায়। এই ঘুড়ি উড়ানো সংস্কৃতি ফেরাতেই এমন আয়োজন করা হয়েছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আই.সি.টি) সাদিকুর রহমান খান। সভাপতিত্ব করেন খুলনা অ্যাসোসিয়েশন অব ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি এর সভাপতি এস এম মিশকাতুল ইসলাম।
খুলনা গেজেট/ টি আই