খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

খুলনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, জেলা প্রশাসনের সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় গত কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে অসহ্য গরমে দিশেহারা হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় খুলনায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০ এপ্রিল খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এছাড়া এদিন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা এবং যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। এ দুটি জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া খুলনায় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, মোংলায় ৪০ ডিগ্রি এবং কয়রায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। প্রখর রোদে খুলনার ফুলবাড়িগেটসহ নগরীর বেশ কিছু সড়কে গলে যাচ্ছে পিচ। তীব্র গরমে হঠাৎ করে হাসপাতালে বেড়ে গেছে রোগীর চাপ। শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর ও ঠান্ডা-গরম লাগার প্রবণতা বেশি।

নগরীর হেলাতলা মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশা চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, এই গরমে মানুষ তেমন বের হচ্ছে না। যে কারণে ভাড়াও কম হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রিকশায় উঠছে না। অসহ্য গরমে তৃষ্ণা মেটাতে বোতলে স্যালাইন গুলিয়ে নিয়েছি। সিটের ভেতরে বোতল রেখে দিয়েছি। তৃষ্ণা লাগলেই পান করছি।

তিনি বলেন, রূপসার নৈহাটীতে আমার বাড়ি। বাড়িতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই গাছ থেকে ডাব পেড়ে খাই। যতটুকু সম্ভব সতর্ক থাকি। অনেক বেশি গরম। রাস্তা থেকে আগুনের মতো বাতাস উঠছে।

নগরীর শিববাড়ী মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শহিদুল হারেজ বলেন, যতক্ষণ বাইরে থাকি ততক্ষণ তো ঠান্ডা পানি ও স্যালাইন খেয়ে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছি। তারপর কাজ শেষে বাসায় ফিরে যতটা পারছি নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাচ্ছি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। এখন প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। বুধবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি হয় ১ হাজার ৪৪৩ জন। আজ বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ৫০৯ জনে। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী রয়েছে তিনগুণ। ফলে চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের।

এদিকে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে না যেতে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। করা হচ্ছে মাইকিং। এছাড়া গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাপপ্রবাহের জন্য খুলনা সিভিল সার্জনের সাথে পরামর্শক্রমে খুলনা জেলাবাসীকে নিন্মোক্ত নির্দেশনা পালনে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো-

১. বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া প্রখর রোদে বাইরে বের না হওয়া। বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে।
২. পানি শূন্যতা পরিহার করতে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
৩. সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা ও বাসি, খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
৪. ভাজা পোড়া খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
৫. ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর বার বার মুছতে হবে।
৬. শ্বাসকষ্টের রোগী ও শিশুদের বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৭. বিদ্যমান প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ/মৎস্য/ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
৮. বাস শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমিকরা যেন বেশিক্ষণ তীব্র রোদে না থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৯. অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!