খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেয়ার আহবান বিএনপির: মির্জা ফখরুল
  চলমান ইস্যুতে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার: প্রেস সচিব
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৮

খুলনাঞ্চলের মহাসড়কে বেপরোয়া ট্রাক, একের পর এক ঝরছে তাজা প্রাণ

তরিকুল ইসলাম

বেপরোয়া ট্রাকের দৌরাত্মে দিন দিন বিপদজনক হয়ে উঠেছে খুলনাঞ্চলের সড়ক মহাসড়কগুলো। মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ চালক কিংবা হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। এতে শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়িসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন কিংবা আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।

রূপসা সেতু বাইপাসে খুলনার জিরোপয়েন্ট এলাকায় সবচেয়ে বেপরোয়াভাবে সম্প্রতি বালুর ট্রাক চলতে দেখা যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে বাইপাস দিয়ে ওভারলোডিং ট্রাক চলাচল করলেও এগুলো নিয়ন্ত্রণে অজ্ঞাত কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ভূমিকা নেই।

সর্বশেষ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) খুলনার ফুলতলায় বাস ও ইটবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালক মোঃ আবু সালেহ হোসেন (৩৭) নিহত হয়েছেন। নিহত ট্রাক চালক আবু সালেহ যশোর সদরের চাউলিয়া গ্রামের আবুল হোসেন মিস্ত্রির ছেলে। খুলনা থেকে যশোরগামী গড়াই পরিবহনের একটি গাড়ি বিপরীত দিক থেকে আসা খুলনাগামী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রাক চালক গুরুতর আহত হয়। উদ্ধার করে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগরীর হরিণটানা থানা এলাকায় নির্মাণাধীন নতুন জেলখানার সামনে ট্রাক চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। নিহতরা হলেন, রায়ের মহল বড় মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মোঃ শহিদের ছেলে সাইফুল (৩৫) ও রায়ের মহল পশ্চিমপাড়া এলাকার মোল্লা শরিফুলের ছেলে নাঈম (২৬)। নিহতদের মধ্যে সাইফুল একটি মোটর সাইকেলের গ্যারেজে কাজ করে। আর নাঈম দিনমজুর। তারা রায়ের মহল এলাকা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে খুলনার জিরো পয়েন্টের দিকে যাচ্ছিল। অপরদিকে যশোরগামী একটি ট্রাক নির্মাণাধীন কারাগারের অদূরে সিটি বাইপাসে তাদেরকে চাপা দিয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই জনের মৃত্যু হয়।

একই দিনে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা যশোর জেলার বাঘাড়পাড়া থানার আগড়া এলাকার বোরহান ও শোহান মোটরসাইকেলযোগে খুলনা-মোংলা মহাসড়ক দিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে বাগেরহাটের শ্যামবাগাদ এলাকার জুটমিল সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে রাস্তা পার হতে যাওয়া একটি বাইসাইকেল এর সাথে তাদের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে মোটরসাইকেলসহ বোরহান ও শোহান রাস্তায় পড়ে যায়। সাথে সাথে মোংলাগামী একটি ট্রাক বোরহানকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এ ঘটনায় পুলিশ ট্রাকটিকে জব্দ করলেও চালক পালিয়ে যায়। নিহত বোরহান উদ্দীন যশোর জেলার বাগাড়পাড়া থানার আগড়া এলাকারসাইদুর রহমান এর ছেলে।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলতলা এম এম কলেজ মোড়ে যশোরগামী ট্রাকের ধাক্কায় সাইকেল আরোহী শুকুর আলী শেখ (৫৬) নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি ফুলতলার বুড়িয়ারডাঙ্গা গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের পুত্র।

২৮ জানুয়ারি বিকেলে খুলনার পাইকগাছায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিব সরদার নামে এক স্কুলছাত্র ট্রাক চাপায় নিহত হয়। সাকিবের চাচা আল-আমিনের সঙ্গে মোটরসাইকেল করে ফুফুর বাড়ি যাওয়ার পথে কপিলমুনির দরগাহমহল মোড় নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী সাকিব ছিটকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত পাইকগাছা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

১৮ জানুয়ারি খুলনায় পাট বোঝাই ট্রাকের চাপায় খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বেগ আনিসুর রহমান (৫২) নিহত হন। বেজেরডাঙ্গা আয়ান জুট মিল থেকে পাট বোঝাই করে রেলিগেট বিশ্বাস জুট ট্রেডার্সে যাওয়ার পথে ট্রাকটি ফুলবাড়ীগেট জামিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন জাব্দিপুর বালুরমাঠ এলাকায় এলে খুলনাগামী মাহেন্দ্র ওভারটেক করার সময় ট্রাক ও মাহেন্দ্রর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাহেন্দ্রের সামনে থাকা বেগ আনিসুর রহমান ছিটকে পড়ে ট্রাকের পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন।

১৫ জানুয়ারি সকাল নয়টার দিকে গল্লামারী জিরোপয়েন্টে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় নিরালা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মাহাবুবুল্লাহ আশিক (১৭) ও বাগমারা এলাকার উত্তম কুমার সিনহা পাখি (৩২) নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। মোটরসাইকেল করে সাতক্ষীরা থেকে খুলনার দিকে আসছিলেন দু’জন। তখন খুলনা থেকে সাতক্ষীরাগামী ট্রাক ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তাদের মৃত্যু হয়।

গেল বছরের ১৪ মে খুলনার রূপসায় বালু ভর্তি একটি বেপরোয়া ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মিম (৭) নামের একটি শিশু নিহত হয়েছে। একই বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি খুলনায় বালুর ট্রাকের চাপায় এনামুল কবির (৫০) নামের এক রাজমিস্ত্রীর মৃত্যু হয়। রূপসা সেতুর দিক থেকে জিরো পয়েন্টের দিকে যাওয়ার সময় হাইওয়েতে বাম পাশের দারোগার লিজ নামক স্থানে ট্রাক তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

খুলনা রেঞ্জ পুলিশ সুপার (অপারেশনস অ্যান্ড ট্রাফিক) তোফায়েল আহাম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বেপরোয়া ট্রাক চালকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। অনেককে ধরা হয়েছে। সামনে আরও তৎপরতা বৃদ্ধি করা হবে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র খুলনা মহানগরের আহবায়ক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব খুলনা গেজেটকে বলেন, খুলনায় সম্প্রতি বালু ব্যবসার কারণে ব্যাপক হারে ট্রাক চলাচল বেড়েছে। এসব ট্রাক অনিয়ন্ত্রিতভাবে সড়ক-মহাসড়কসহ নগরীতে চলাচল করছে। যেখানে ট্রাফিক সিস্টেমের কোন বালাই নেই। অজ্ঞাত কারণে পুলিশ নিরব থাকছে। এছাড়া মহাসড়কের পাশে আবাসন বেড়ে যাওয়ায় ছোট যানবাহন চলাচল অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মহাসড়ক দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচলেও দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি খুলনা থেকে চুকনগর পর্যন্ত ডিভাইডারের ব্যবস্থাসহ মহাসড়কের সাথে সাইড রাস্তা তৈরির আহবান জানান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!