খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৭ মে, ২০২৪

Breaking News

খুলনার করোনা সাসপেক্টেড ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে মৃত ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা সাসপেক্টেড আইসোলেশন ওয়ার্ডটি একটি মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে। একের পর এক মুমূর্ষু রোগী আসছে, আর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ায় অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যুর পর কোন রোগীরই উপযুক্ত সময় নমুনা সংগ্রহ না হওয়ার কারণে ২৮ জনের মধ্যে মাত্র ২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এছাড়া গত দু’দিনে মৃত্যু ৬ জনের নমুনা রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় ওয়ার্ডটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নাহলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর এ মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবার শঙ্কা রয়েছে।

আইসোলেশন ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, যশোরের কেশবপুর উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা মোসলেম দফাদারের ছেলে মোঃ আলম (৩০) লিভারে সমস্যা নিয়ে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠিয়েছিলেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। ভর্তির সময় তার শ্বাসকষ্ট ছিলো বলে দাবি তার পরিবারের। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে করোনা সন্দেহে সেখানে উপস্থিত চিকিৎসক তাকে নমুনা সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন।

এছাড়া একটি স্যালাইন ছাড়া তাকে আর কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলেও জানান পরিবারের সদস্যরা। মৃত্যুর ১২ ঘন্টা পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এদিকে গত দু’দিনে এই ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৬ জনের। নগরীর রায়েরমহল এলাকার মৃত মজিদ হাওলাদারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৬৫), নগরীর দৌলতপুর এলাকার রাজিব হোসেনের মেয়ে মিম (১২), সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার সুশান্ত মন্ডলের ছেলে রিপন (২২) ছাড়াও নগরীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ নজরুল ইসলাম (৩৯) এরও একইভাবে করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এই ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ : মেডিসিন ওয়ার্ডে গত ২৮ মে পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন নাজমা বেগম (৩২)। পরদিন করোনা সাসপেকটেড ওয়ার্ডে পাঠানো হয় নমুনা পরীক্ষার জন্য কিন্তু ৩ জুন করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় পুনরায় ৪ জুন মেডিসিন ওয়ার্ডে যায়। নাজমা বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য যে পাঁচ দিন অপেক্ষা করেছি তাতে আমার জীবনে সব থেকে খারাপ সময় পার করেছি। বার বার ডাকাডাকি করেও চিকিৎসক আসেননি, ঠিকমত নার্স ও অন্যান্য কেউ কাছে আসতে চায়নি। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হওয়া মিম, রিপন এবং দেলোয়ারের পরিবারও। তাদের আক্ষেপ একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো আইসিইউ সার্ভিস বা অন্যান্য সেবা দিতে পারলে রোগীরা ভালো হতো। কিন্তু এখানে শুধু পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কোন গুরুত্বই দেয়া হয়না।

উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হলেও পরীক্ষায় করোনা মেলেনা : খুমেক হাসপাতালের করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশ ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা উপসর্গ নিয়ে। এর মধ্যে গত দু’দিনেই ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে মৃত্যু ২৮ জনের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করা হলে মাত্র ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তবে ৬ জনের পরীক্ষার ফল এখনও পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নানা কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শরীরে জ্বর ও নানান রোগের উপসর্গ। কিন্তু তাকে যদি কোন ধরণের ডায়াগনস্সি না করে করোনা পরীক্ষার জন্য ফেলে রাখা হয় তাহলে তার অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে চলে যায়, ফলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে যেহেতু করোনার ডায়াগনস্সিটা আগে প্রয়োজন, সে হিসাবে যত দ্রুত করোনার পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে তত রোগীদের জন্য ভালো।

খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ এস এম তুষার আলম বলেন, মৃত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস না পাওয়ার দুটি কারণ। একটি হলো তাদের শরীরে ভাইরাস নেই, অন্যটি হলো মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় পর নমুনা নিলে ভাইরাসে অস্তিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

সাধারণ রোগীদের জীবন বাঁচাতে করণীয় : খুলনা মেডিকেল কলেজের কোন ক্যাজুয়ালিটি বিভাগ না থাকলেও সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পদায়ন করা আছে, যারা নির্দিষ্ট কোন কাজ না থাকলেও বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাথে সংযুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। যেহেতু ক্যাজুয়ালিটি বিভাগেই আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা আছে, এখানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে ক্রিটিকাল রোগীদের সেবা দেয়া যেতে পারে। যেদিন রোগী ভর্তি হবে সেদিনই তাদের পরীক্ষা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদান করলে এসব রোগীদের সঠিক সেবা পাওয়ার মাধ্যমে মৃত্যু হার কমবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজের সম্মেলন কক্ষে আজ (সোমবার) জরুরী সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন থেকে পুলিশ ও সরকারি চাকুরিজীবীরা করোনার নমুনা পরীক্ষা করবে সদর হাসপাতালে এবং করোনা ইউনিটে যারা ভর্তি থাকবেন দিনের দিন তাদের নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে করোনা সাসপেকটেড ইউনিটে সেবায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে।

খুলনা গেজেট/বশির




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!