খুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কিন্তু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র ১২টি শয্যা। ফলে শয্যা সংকটে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদেরও সেবা নিতে হচ্ছে। এদিকে ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই মাস থেকে হাসপাতালে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩৭ জন। যার মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৮৭ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৬ জন।
হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে বেড মিলছে না। ফলে বাধ্য হয়ে মাদুর, কাঁথা, বালিশ বিছিয়ে বারান্দার ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে রোগীর সঙ্গে স্বজনরাও আসে। এতে উভয়কেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া সাধারণ রোগীদের পাশে মশারি টাঙিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরও রাখা হচ্ছে। তাদের আলাদা ব্যবস্থা করা হলে ভালো হয়।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকালে খুমেকে ভর্তি হয়েছেন বাগেরহাটের পানবাড়িয়া গ্রামের সুলতান শেখ। তিনি বর্তমানে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার এক নিকটাত্মীয় জানান, সুলতান শেখ গত শনিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোববার সকালে তাকে বাগেরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বুধবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন কিছুটা সুস্থ আছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। শুধু ডেঙ্গু বাহিত মশা যদি না কামড়ায় তাহলে ডেঙ্গু ছড়ানোর কোনো আশঙ্কা নেই। একটি ওয়ার্ডে মশারি দিয়ে যদি ডেঙ্গু রোগীকে সুরক্ষিত করতে পারি, আর তার পাশে যদি অন্য কোনো রোগী রাখা হয় তাতেও ডেঙ্গু ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। হাসপাতালে বর্তমানে ৪৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। ডেঙ্গু রোগীকে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখার পরেও যদি এই রোগ ছড়াতো তাহলে কিন্তু হাসপাতালে মহামারি আকার ধারণ করতো।
তিনি আরও বলেন, মানুষ ভুল বুঝে আতঙ্কিত হচ্ছে। আমি বলব, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনি সচেতন হলে ডেঙ্গু আপনার কিছু করতে পারবে না। শুধুমাত্র মশার কাছ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে। তাহলেই আপনি ডেঙ্গুমুক্ত থাকতে পারবেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার মো. রবিউল হাসান বলেন, এবার সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেসব রোগী এসেছেন তাদের মধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের রোগী কম। বেশিরভাগই বাহিরের জেলার। তাদের অনেকেই ঢাকা থেকে আসা অথবা স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এটা ঠিক যে হাসপাতালে শয্যা সংকট রয়েছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে মাত্র ১২টি বেড রয়েছে। বর্তমানে ৪৫-৪৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। ফলে তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে বিভিন্ন ইউনিটের বারান্দার ফ্লোরে রাখতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এটি (খুমেক) ৫০০ বেডের একটি হাসপাতাল। এখানে বর্তমানে রোগী রয়েছে ১ হাজার ৪৭৯ জন। প্রায়ই রোগীর সংখ্যা ১৫০০ পেরিয়ে যায়। এরমধ্যে ডেঙ্গু রোগীও রয়েছে। ৫০০ বেডের হাসপাতালে এতো রোগীর সেবা দেওয়া আসলেই খুব কঠিন। তারপরও আমরা রোগীদের সঠিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।