খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সুন্দরবনের বাঘশুমারির চূড়ান্ত ফল ঘোষণা আজ

খালিশপুরে কারখানা কমিটির সমাবেশ, শ্রমিকদের বকেয়া প্রদানের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলের মধ্যে খুলনার ৫টি জুটমিলের শ্রমিকদের প্রাপ্য বকেয়া বেতন প্রদানসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সদস্যরা।

কাশিপুর মোড়ের প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য ডালিম কাজী।

শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খুলনা মহানগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে রাজপথ অবরোধের কর্মসূচি ছিলো খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির। বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে খালিশপুর জুট মিলগেট থেকে পাটকল শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিলটি নতুন রাস্তার দিকে কিছুদূর অগ্রসর হলে পুলিশ দফায়-দফায় বাঁধা প্রদান করে।

পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে বার বার শ্রমিকরা নতুন রাস্তার দিকে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু খালিশপুরের বিআইডিসি রোডের কাশিপুর মোড়ে এলে পুলিশ কড়া প্রহরা দিয়ে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের ঘিরে রাখে। অবশেষে কাশিপুর মোড়ে অবরোধের পরিবর্তে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে বাধ্য হন শ্রমিকরা।

এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল হক খান, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য খুলনা জেলা সমন্বয়ক রুহুল আমিন, প্লাটিনাম জুটমিলের সাবেক সিবিএ নেতা মোঃ খলিলুর রহমান, কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসেদ আলম শমসের, গণসংহতি আন্দোলন ফুলতলা উপজেলা আহবায়ক মোঃ অলিয়ার রহমান, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহবায়ক আল আমিন শেখ।

অবরোধ করতে না দেয়ায় এবং পুলিশ কর্তৃক বার বার বাঁধা প্রদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, সরকার পাটশিল্প ধ্বংস করে দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর হাতে জনগণের সম্পদ তুলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সরকার বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল।

সরকার মহামারী করোনার সময়ে শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে প্রায় ৬০ হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী-বদলী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব কর্মহীন অভুক্ত শ্রমিকদের জীবন অনিশ্চিত ও দিশাহীন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে সকল পাটকল শ্রমিক সম্পূর্ণ প্রাপ্য বেতন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ফলে তাদের স্ত্রী-পুত্র- কন্যাদের লালন-পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাটকল বন্ধের ২ বা ৩ মাসের মধ্যেই শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা স্ট্রোক, হার্ট, কিডনীসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত। অথচ টাকার অভাবে এসব অসুস্থ সদস্যদের চিকিৎসা করাতে পারছে না।

এমতাবস্থায় দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক-কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন অচল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীরাই অতিরিক্ত মুনাফালাভের জন্য দ্রব্যমূল্য সীমাহীন বৃদ্ধি করছে। এসব লুটেরা ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে।

বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রের সকল সম্পদ এদেশের জনগণের। অথচ সরকার জনগণের সম্মতি ছাড়াই সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করার ব্যবস্থা করছে। দেশের পাটশিল্পসহ সমস্ত খাতে চুরি-দুর্নীতি রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করছে। দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী, সচিব, রাজনীতিবিদ ও বিজেএমসির কর্মকর্তা হাজার-হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে। অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া বানাচ্ছে। অথচ সরকার দুর্নীতির শিরোপাধারীদের আটক ও বিচার করতে পারছে না। অথচ সরকার শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনার জন্য রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করলে প্রশাসন দিয়ে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত।

বক্তারা চাকুরীহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি পাটকলের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা মজুরী কমিশন, ২০১৫ অনুযায়ী প্রাপ্য বেতন, বকেয়া ৬টি বিলসহ অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানান। নতুবা বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করবে শ্রমিকরা।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!